সহিংসতায় শেষ হলো স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূল স্তর – ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সাত পর্বের সমাপ্ত এই ভোটেও ছিল রক্তের হোলি খেলা, ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিরা ফুলিয়ে, আস্তিন গুটিয়ে, পেশি প্রদর্শন করে বাঙালি যে রাজনীতি করে তার চেয়েও বেশি কিছুর প্রদর্শন ছিল এবারের ইউপি নির্বাচনে। ছিল অ্যাকশন মুভির দৃশ্যের মতো আগ্নেয়াস্ত্রের শ্যুটিং দৃশ্য। মারামারি, সংঘাত–সহিংসতায় শেষ দিনের বিকেল পর্যন্ত ১০১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল এবার।
শেষ দিনে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রদর্শনের যেসব ছবি এসেছে তা যে কোন হলিউড বা বলিউড সিনেমাকে হার মানাবে। পুলিশের চোখের সামনে এমন প্রকাশ্য অস্ত্রবাজির পরও নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি আছে নির্বাচন কমিশনের। সন্তুষ্টি নিশ্চয়ই আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরও। কিন্তু এবারের ইউপি নির্বাচন যে একটি খুন যখমের উৎসবে পরিণত হলো সে নিয়ে কোথাও কোন জিজ্ঞাসা নেই। এই নির্বাচন থেকে সংঘাত আর সহিংসতা, বিবাদ আর বিদ্বেষ ছাড়া আর কী পেয়েছে আওয়ামী লীগ সে প্রশ্ন উচ্চারিত হওয়ার কোন পরিবেশ দলের কোথাও আছে কিনা সেটাও কর্মীরা জানে না। আমরা জানলাম যে, নৌকা প্রতীক নিয়ে হেরে গেছে প্রায় দেড় হাজারের বেশি প্রার্থী।
অথচ নির্বাচন শুরুর আগে একটা ধারণা প্রচলিত ছিল যে, বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপিহীন এই স্থানীয় নির্বাচনে যারা সরকারি দলের প্রতীক নৌকা পাবেন তাদের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে। দলের ভেতর গণতন্ত্রের চর্চা থাকলে নিশ্চয়ই এগুলোর একটা বিশ্লেষণ হতো, নিশ্চয়ই যারা যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তাদের জবাবদিহি করতে হতো।
একটা কথা বলা হচ্ছে যে, প্রার্থী মনোনয়নে ভুল ছিল, ছিল মনোনয়ন বাণিজ্য। ফলে ফলাফলে প্রত্যাশা পূরণ হয় নি। তবে বলতেই হবে যে, এবারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শাসক দলের জন্য বড় বার্তা বয়ে এনেছে। আওয়ামী লীগ আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে এবং দলের মধ্যকার বিশৃঙ্খলা কতটা উগ্র পর্যায়ে গিয়েছে তার এক নগ্ন প্রদর্শনী ছিল এই ইউপি নির্বাচন।