বেশ কিছুদিন ধরেই টেলিভিশনের পর্দায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি সম্পর্কে চমৎকার সব সংবাদ দেখছিলাম। সত্যিই দৃশ্যগুলো এতটাই মোহনীয় ছিল যে বারবার মনে হচ্ছিল, এদের যদি দেখে আসতে পারতাম, তাহলে এ কঠিন ইট-পাথরের বদ্ধ জায়গা থেকে কিছু সময়ের জন্য অন্তত প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম, পাখি দেখতে যেতেই হবে। এ সুন্দর দৃশ্য বাস্তবে না দেখে থাকা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে ঢুকতেই দারোয়ান জানালেন, ভেতরে যেতে হলে গাড়ি ঢোকানো যাবে না। তবে রেজিস্ট্রার অনুমতি দিলে যাওয়া যেতে পারে। তাৎক্ষণিক আমাকে একটা নম্বরও দেওয়া হলো। কিন্তু যুগপৎ সেই নম্বরে চেষ্টা করেও কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। অবশ্য আমাদের সামনে দিয়ে কিছু গাড়ি যেতে দেখলাম। হয়তো তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। আমাদের দেশে তো এ রকম হয়েই থাকে। এ ছাড়া ধারণা করা যেতে পারে, পাখিদের নিরাপত্তা, তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়তো এ বিধানের কারণ। এ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নীতি সমর্থনযোগ্য। ছুটির দিন হলেও অসংখ্য শিক্ষার্থী এবং আমাদের মতো দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেল। মনে মনে ভাবলাম, পাখি দেখতে তাহলে অনেকেই পছন্দ করেন। অর্থাৎ সাধারণের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আছে।
অগত্যা আর কী করা, ভেতরে ঢুকলাম এবং সেখানে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত গাড়ি দেখা গেল। তারা পুরো এলাকা আমাদের ঘুরে দেখাবে এবং পাখি দেখা পর্যন্ত গেলে ভাড়া মাত্র ১০০ টাকা। আগেই জেনেছিলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পাখিরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ হাজার মাইলও পাড়ি দিয়ে এখানে আসে। মূলত শীতের সময় এসব পাখিরা চলে আসে সুদূর চীন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে। শীতকালে সেসব দেশে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায়, বরফ পড়তে থাকায় খাবারের সংকটের কারণে এরা ভিন দেশে পাড়ি জমায় কিছু সময়ের জন্য অতিথি হয়ে। যদিও এই অতিথিদের আমরা কী রকম সমাদর করি, তা জানা নেই।