সম্প্রতি মহসিন খান নামের এক ব্যবসায়ীর ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের ভীষণভাবে বিষাদগ্রস্ত করেছে। এর আগে বগুড়া শহরের এক শিক্ষিত যুবক ‘দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে বিস্মিত করেছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি নালিতাবাড়ী উপজেলার এক কৃষক জমির মধ্যে ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
ভারতে গত বছরেই বেশ কয়েকজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। দারিদ্র্যের কারণে ভারত ও বাংলাদেশে মায়ের শিশুসন্তানসহ রেললাইনে ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যার একাধিক ঘটনা গত কয়েক বছরে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মন খারাপ হলেও তা মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ, বিবেককে নাড়া দিলে এর প্রতিকারের জন্য প্রতিবাদ করার কথা ছিল।
কার্ল মার্ক্স প্রদত্ত পুঁজিবাদের সংজ্ঞার মধ্যেই ‘শোষণ’ শব্দটি বিদ্যমান। পুঁজিবাদী তাত্ত্বিকেরাও এ ব্যবস্থায় যে শোষণ হয়—অস্বীকার করেন না, কারণ মার্ক্সের ‘উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব’ গাণিতিক প্রমাণসিদ্ধ। মহসিন খান বারবার উল্লেখ করেছেন তিনি কীভাবে সবার দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। বগুড়ার ওই যুবক প্রথম শ্রেণিতে পাস করেও দু–তিন বছর ধরে চাকরি পাচ্ছেন না কেন? পাচ্ছেন না কারণ তাঁর মামা-চাচাও নেই, ঘুষ দেওয়ার ক্ষমতাও নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা একটি শোষণমূলক ব্যবস্থা। আবার কৃষকও প্রতারিত হয়েছেন আরেক চতুর কৃষক দ্বারা, যিনি বুদ্ধি দিয়ে, অর্থ দিয়ে ইউপি সদস্যের আনুকূল্য লাভ করতে পেরেছেন।
নিঃসঙ্গতা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা হলে কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে পড়বে। কারও এগিয়ে যাওয়া আর কারও পিছিয়ে পড়া মানে বৈষম্য সৃষ্টি হওয়া। এগিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা উঁচু শ্রেণিতে উঠে গিয়ে নিচের দিকে আর ফিরে তাকান না। যাঁরা নিচে পড়ে গেলেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁরা আর মেলামেশা করেন না। উঁচুতে ওঠার পরও প্রতিযোগিতা থামে না; বরং আরও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ব্যবধান, আর ব্যবধানই সৃষ্টি করে নিঃসঙ্গতা। আত্মহত্যার আগে মহসিন খান বলছিলেন, ‘নিঃসঙ্গতার যে কি কষ্ট, তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বোঝে।’