নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বাইরের শান-শওকত, গানম্যান, প্রোটেকশন ফোর্স, অফিস ও বাসায় জাতীয় পতাকা, গাড়িতে নিজস্ব পতাকা ইত্যাদি আমার জন্য ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। কিন্তু অভ্যন্তরীণ নানাবিধ টানাপোড়েনে আমি বিপর্যস্ত ছিলাম। আমি নির্বাচন সম্পর্কে নীরব জনগোষ্ঠীর অশ্রুত ভাষা শ্রবণের চেষ্টা করে তাদের মনোভাব অনুযায়ী চলতে চেয়েছি। কারণ, নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন অপরিহার্য। বিভিন্ন সময় মিডিয়ার সামনে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছি, তাতে নির্বাক জনগণের নীরব ভাষার আমি ছিলাম মুখপাত্র। কিন্তু বাস্তব অবস্থার টানাপোড়েন এড়াতে পারিনি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় নতুন কমিশন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালনে বাইরে কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। প্রথম দিকে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ ছিলাম। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভেতর ও বাইরের নানা চাপের কারণে সরকারের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ ছিল না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব, এটা প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ফলে এই নির্বাচন ছিল ব্যতিক্রমী। অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এর স্বরূপ সন্ধান করি। এর বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করি আর বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি একক দায়িত্ব পালন করেছি। অনিয়মের কারণে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েও সহকর্মীদের অসহযোগিতায় আমি তা পারিনি। এ দুটি নির্বাচনে কমিশনের কোনো কর্তৃত্ব ছিল বলে মনে হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতিত্ব ছিল দৃশ্যমান। আবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল অনিয়মের মডেল। বাকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেরও তথৈবচ অবস্থা। যেনতেন প্রকারে নির্বাচন হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। ওই নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর অস্তিত্ব ছিল না। যদিও সিইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে দাবি করেন। জেলা প্রশাসকেরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সিটিং এমপিদের বিষয়ে তাঁদের নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা সম্ভব ছিল বলে মনে করি না। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে? এভাবে না অবাধ, না সুষ্ঠু, না নিরপেক্ষ, না আইনানুগ, না গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।