সিরাজুল আলম খান ষাটের দশকে তরুণ সমাজকে স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সংগঠিত করেছেন। তিনি এমন এক সমাজ গড়ার কথা বলতেন যেখানে বাঙালির শাশ্বত সংস্কৃতি অটুট থাকবে, নিজেদের অর্থনীতি বিকশিত হবে। ষাট দশকে তার কাছ থেকে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা শুনে ঝিলিক দিয়ে যেত তরুণ মনে। স্বাধীনতা সংগ্রামে শ্রমিকদেরও তিনি সংযুক্ত করেন। নিরবচ্ছিন্ন কাজ করেন পেশাজীবী, সংস্কৃতিসেবী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে।
গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থেকে একের পর এক আন্দোলন রচনা করেন সিরাজুল আলম খান। মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে হাজারো জনতার মুখে উচ্চারিত হয় বজ্রকণ্ঠের স্লোগান 'জয় বাংলা', 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা', 'পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা'। ১৯৬২ সালে ত্রৈয়ী নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় বিএলএফ। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শে বিএলএফ-এ যুক্ত হন শেখ ফজলুল হক মণি ও তোফায়েল আহমেদ। কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন বিএফএলের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। এই নেতৃত্বে সারাদেশে ছাত্রলীগের মধ্যে যে স্বাধীনতার সপক্ষে কাজ চলতে থাকে আর এরই ঘনীভূত রূপ ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান।
এই আন্দোলন ছিল ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি। যেখানে ছিল স্বায়ত্তশাসন, বঙ্গবন্ধুসহ ওই রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি। এর ফলস্বরূপ '৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় ও '৭১-এ স্বাধীনতা অর্জন। তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ১৯৬৫ সালের শেষ দিকে জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা কাজী আরেফের মাধ্যমে। ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি তিনি তখন গণসংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন। '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পার করে যখন আনুষ্ঠানিক সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন করতে যাচ্ছি তখন প্রধান বাধা এলো আওয়ামী লীগ থেকে। ছাত্র-যুবকদের পর স্বাধীনতার লড়াইয়ের জন্য জনগণের যে অংশটিকে সংগঠিত করা অতি আবশ্যক বলে তার মনে হয়েছিল তা হলো শ্রমিক সমাজ। স্বাধীনতার আগে এদেশে শ্রমিকের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না।