একাত্তর আমাদের জাতীয় জীবন ও ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তনের অনন্য অধ্যায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এক সুতায় গেঁথেছিল। কতিপয় স্বজাতদ্রোহী বাদে বাঙালি যার ডাকে ও নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই অক্ষয় অধ্যায়ের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হয়েছিল জাতির রক্তমূল্যে। রণাঙ্গনে এবং রণাঙ্গনের বাইরে নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহস ও প্রত্যয়ের ফল এই রক্তস্নাত বাংলাদেশ।
জাতির সেই অক্ষয় অধ্যায়ের একজন বীর সৈনিক শহীদজায়া মুশতারী শফীর চিরপ্রস্থানে আমরা শোকে কাতর। ২০ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন। তার ৮৪ বছরের জীবনাবসান আমাকে নিয়ে গেল পেছনের দিনগুলোতে। মানসপটে ভেসে উঠছে তাকে ঘিরে কত স্মৃতি, কত আন্দোলন-সংগ্রামের অধ্যায়। বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুশতারী শফীকে।
তাকে চিনতাম মুক্তিযুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই। তখন তিনি চট্টগ্রাম বেতারের সঙ্গে যুক্ত। তারপর তাকে ধাপে ধাপে এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আরও গভীরভাবে জানতে শুরু করি। গড়ে উঠেছিল পারিবারিক সম্পর্ক। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল অনবদ্য। এ জন্য ২০১৬ সালে শহীদজায়া মুশতারী শফীকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। তিনি জন্মেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরে ১৯৩৮ সালে। মনে পড়ছে, একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোর আগে থেকেই আমরা চট্টগ্রামে নানা কর্মসূচি পালনে ব্যস্ত ছিলাম। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে আমি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি।
১৯৬৯ সালে একই বিভাগে যোগ দিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. আনিসুজ্জামান, ড. শামসুল হক প্রমুখও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। শামসুল হক পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বও নিয়েছিলেন। আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, তখন সভাপতি ছিলেন শামসুল হক। তখন আমরা বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার সমর্থনে চট্টগ্রামে কয়েক দিনের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম। ডা. শফী ও মুশতারী শফীও ছিলেন এর অংশীজন।