হুজুগপ্রিয় বাঙালি হুজুগ ছাড়া বেঁচে যেন সুখ পায় না। একটা কিছু পেলেই হলো। তার ভালো-মন্দ, সত্যাসত্য, ন্যায়-অন্যায় বাছ-বিচারের দরকার নেই। কোনো বিষয় লোকের মুখে মুখে চলতে-ফিরতে, চায়ের আড্ডায়, হাটে-বাজারে বেদম আলোচিত হচ্ছে, আর যাবে কোথায়? হাতের কাজ ফেলে হলেও বাঙালির ওতে শরিক হওয়া চাই। যেন তা না হলে পেটের ভাত হজম হবে না। আর সুযোগ পেলেই করা চাই সুচিন্তিত-দুশ্চিন্তিত মন্তব্য।
সর্বশেষ যে হুজুগ নিয়ে এই ভূখণ্ডের বাঙালি নাওয়া-খাওয়া ভুলে সরস আড্ডায় মেতেছিল, কাহিনির নায়কের আকস্মিক অন্তর্ধানে তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। হুজুগেরা হয়তো অপেক্ষায় ছিল নতুন কোনো মজমার, কিন্তু ‘নায়ক’ মাননীয় সংসদ সদস্য সদ্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের মুরোদে কুলায়নি কানাডার বেরসিক কর্তাব্যক্তিদের ও ওই দেশের প্রবাসী বাঙালিদের প্রতিরোধকে অষ্টরম্ভা দেখিয়ে ভিআইপি (ভেরি ইনোসেন্ট পারসন) সেজে বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করে ওই দেশে ঢুকে পড়া। তবে নির্দেশিত হয়েই হোক বা স্বপ্রণোদিত হয়েই হোক মন্ত্রিত্ব যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক, কালো টুপি ও অন্যান্য পর্দা-পুশিদা দ্বারা নিজেকে আবৃত করে সকলের অগোচরে দেশত্যাগের সিদ্ধান্তটি তাঁর নিজের জন্য ও দেশের জন্য সঠিক ছিল বলেই মনে হয়। অন্যথায়, আমাদের গাঁও-গেরামের ‘আন্ডার ম্যাট্রিক পাস’ উঠতি নেতাদের ভাষায় পরিস্থিতির কন্ডিশন দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। নারীকুল সম্বন্ধে তিনি যেসব আপত্তিকর ও অশ্লীল কটূক্তি করে যাচ্ছিলেন সেসব অসম্মানের জবাবে মায়েরা-বোনেরা যদি সম্মার্জনী হাতে তাঁকে কোথাও ধাওয়া দিত তা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। তাঁর এবং কর্তৃপক্ষের হয়তো ধারণা ছিল তিনি দ্রুত মঞ্চ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেলে সেই পুরনো ‘আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড’, চোখের সামনে নেই তো মনেও নেই, থিওরি কাজ করবে, অদর্শনে পাবলিক ধীরে ধীরে তাঁকে ও তাঁর সুবচনগুলোকে নির্বাসনে পাঠাবে।