সিলেট ছাত্রলীগে চলছে শক্তির খেলা। কে কার চেয়ে এগিয়ে সেটিই এখন দেখানো হচ্ছে। চলছে শোডাউন ও পাল্টা শোডাউনও। বুধবার সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি অংশের নেতারা শোডাউন করেছিলেন। আর গতকাল বঞ্চিত অংশের নেতারা পাল্টা শোডাউন করলেন। উভয় শোডাউনেই হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। ফলে ফের ছাত্রলীগে সরব হয়ে উঠেছে সিলেটের রাজনীতি। এ নিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। বঞ্চিত বলয়ের নিয়ন্ত্রক আওয়ামী লীগ নেতারাও মাঠের রাজনীতিতে আড়াল থেকে শক্তি যোগাচ্ছেন। ৪ বছর সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি ছিল না। ফলে ছাত্রলীগের রাজনীতি পুরোপুরি নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। গ্রুপ, উপগ্রুপের নেতারা বিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও কমিটি না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন সিলেটে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছিল। এ নিয়ে চিন্তিত ছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সিলেটে একাধিক গ্রুপ, উপগ্রুপ থাকার কারণে বার বার উদ্যোগ নেয়া হলেও কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ৪ বছর অপেক্ষার পর চলতি মাসের প্রথম দিকে সিলেট জেলা ও মহানগরের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। মাত্র ৪ সদস্যর কমিটি গঠনের পর সরব হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের রাজনীতি। দেখা দিয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভও। একদিকে চলছে আনন্দ, অন্যদিকে বিক্ষোভ। ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের টিলাগড়ের গোপাল টিলায়, দর্শন দেউরী, কাস্মির ও তেলীহাওর বলয় ৪টি পদ পেয়েছে। এর বাইরে আর কোনো বলয়ই পদ পায়নি। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেলেও তেলীহাওর ব্লকের নেতারা এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ তাদের বলয়ে ছাত্রলীগের জেলার সভাপতি হতে যোগ্য প্রার্থী ছিলেন জাওয়াদ খান। ওই বলয় থেকে রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক করায় জাওয়াদ খান সভাপতির দৌড়ে পিছিয়ে যান। এ নিয়ে প্রথমেই তেলীহাওর গ্রুপে প্রথম ক্ষোভ দেখা দেয়। পরবর্তীতে এ গ্রুপের সঙ্গে এসে যুক্ত হয় চৌহাট্টা, টিলাগড়ের একাংশসহ আরও কয়েকটি উপ-বলয়ের নেতাকর্মীরা। এ কারণে সিলেট ছাত্রলীগে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। কমিটি বাতিলের দাবিতে বঞ্চিত অংশের নেতারা লাগাতার আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছিলেন। এই হুমকিতে তারা এখনো অটল রয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে গত বুধবারের শোডাউনের পাল্টা শোডাউন গতকাল দিয়েছেন বঞ্চিত অংশের নেতারা। আর এই পাল্টা শোডাউনে সিলেট নগর ছাড়াও ১৩ উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে যুক্ত হয়েছিলেন। বঞ্চিত অংশের ছাত্রলীগের শোডাউন ছিল কমিটি বিরোধী। এ জন্য নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ছিল নানা প্ল্যাকার্ড। এসব প্ল্যাকার্ডের ভাষা নগরবাসীর নজর কেড়েছিল। বঞ্চিত অংশের ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন, তারা গতকাল বেলা ২টায় নগরীর তেলীহাওর এলাকা থেকে মিছিল বের করে। এই মিছিলটি নগরীর শহীদ মিনারের সামনে আসে। এ সময় শতাধিক নেতাকর্মী গিয়ে চৌহাট্টা এলাকায় রাস্তা ব্যারিকেড দেয়। এতে প্রায় আধঘণ্টা চৌহাট্টা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে তারা সমাবেশ করে কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দিয়ে চলে যায়। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের এই মুহূর্তের সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে তেলীহাওর, টিলাগড় ও চৌহাট্টা বলয় কেন্দ্রিক। তারা গতকাল যে শোডাউন দিয়েছেন সেখানেও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল। এদিকে শোডাউন পাল্টা শোডাউন হওয়ায় সিলেট ছাত্রলীগের চলমান বরফ গলাতে আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের মধ্যে ফের এ নিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছেন। সভাপতি হতে অনেকেই যোগ্য ছিলেন। কিন্তু পদ পেয়েছেন মাত্র একজন। তেমন কীভাবে মহানগর ছাত্রলীগের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি ৬ জনকে কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়েছে। এরপরও ক্ষোভ কমেনি। এখন পর্দার আড়ালে বিষয়টি মিমাংসা চালানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতারাও এতে হস্তক্ষেপ করছেন। নেতারা জানিয়েছেন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দিন শেষে সবাই এক হয়ে চলতে হবে। সেই চেষ্টায়ই এখন চালানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে না জানিয়ে কমিটি যাতে না দেয়া হয় সে জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। শিগগিরই সুখবর আসতে পারে বলে জানান তারা। এদিকে গতকাল বঞ্চিত অংশের শোডাউনে যাননি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের নির্দেশের প্রতি তাকিয়ে আছেন তিনি। ডাক পেলে ফের নিজ বলয়ে ফিরতে চান। এ জন্য তিনি আসন্ন পুর্ণাঙ্গ কমিটিতেও নিজ বলয়সহ বঞ্চিত অংশের ন্যায্য হিস্যাও নিশ্চিত করতে চান। রাহেল সিরাজের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, নাসির উদ্দিন খানের দেখা পেতে মুখিয়ে আছেন রাহেল সিরাজ। আশা করা হচ্ছে; বরফ দ্রুতই গলে যাবে। গতকাল বঞ্চিত অংশের নেতারা নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সমাবেশ করেন। সমাবেশে তারা বলেন, ‘অছাত্রদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ জন্য তারা ঘোষিত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাক্কুর আহমদ জনি। মহানগর ছাত্রলীগ নেতা বাসিত তুহিনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক এম আর মুহিব, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক রুমু, দীপঙ্কর টিপু, ফাহিম রশিদ চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম সৌমিক, মুশাহিদ আলী, শিপু চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আশফাক আহমদ মাসুদ প্রমুখ।