সম্প্রতি দুর্গোৎসব দেখতে আমার এক অনুজপ্রতিম চিকিৎসক বন্ধুর আমন্ত্রণে পলাশ গিয়েছিলাম। ঢাকার অদূরে নরসিংদীর ঘোড়াশাল পেরিয়ে পলাশ যাওয়ার পথ। দুপুরে রোদের তাপ অগ্রাহ্য করে দুই দিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য এতই চমৎকার লাগছিল যে বারবার জীবনানন্দ দাশের কবিতা মনে পড়ছিল- 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর...'। যদিও এই পথে ঘোড়াশাল সার কারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় শিল্প-কারখানার স্থাপনা আছে। পথের দু'পাশে বিল, ডোবা, ঘন সবুজ পুকুরে লাল শাপলা, পদ্মফুল ভেসে বেড়াচ্ছে। মধ্যাহ্নের তাপ ভুলে গিয়ে গান গেয়ে উঠলাম। পলাশ বাজারে ঢুকতেই সর্বত্র পূজার আয়োজন। বহু মানুষের একত্রে মধ্যাহ্নভোজ প্রায় শেষ। ডা. সমরেশের বাড়ি গিয়ে উঠলাম। বাড়িটি শীতলক্ষ্যার কোলে গড়ে উঠেছে। শীতলক্ষ্যা সত্যিই শীতল। গত একশ বছরে এ নদীর পাড় ভাঙেনি। যদিও শীতলক্ষ্যায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা, বার্জ, লঞ্চ, স্পিডবোট প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। দুপুরের খাবারের সময় এলাকার অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো। কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ প্রবাসী নানান পেশার মানুষ। তার মধ্যে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ সবাই আছে। আমার মনে নানা কৌতূহল! ৪৮টি দুর্গাপূজার প্যন্ডেল ওই এলাকায়। প্রতি বছরই পূজা হয়ে আসছে। কিন্তু কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি; দাঙ্গা হয়নি কোনোকালেই এবং প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা তো ঘটেইনি। অথচ এই দিনই কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর এসব ঘটেছে। সাধারণত এসব ঘটনা বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলে ঘটতে দেখা গেছে। নোয়াখালীর দাঙ্গা ঠেকাতে তৎকালে স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীও এসেছিলেন।