জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি স্পর্শকাতর, জনস্বার্থ সংরক্ষণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ওপর দেশের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব অর্পিত। বাজেট অর্থায়নে বেশির ভাগ টাকা জোগান দেয় এনবিআর। একই সঙ্গে শুল্ক ও কর কাঠামো কী হবে, বিনিয়োগ কেমন হবে, পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে কি থাকবে না এসব বিষয় এনবিআরে নীতি ও কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
এনবিআরের উদ্দেশ্য মূলত চারটি, যাকে বলা চারটি আর (4R-Revenue, Re pricing, Re distribution and Representation)। প্রথমত, রাজস্ব আদায় করা। কেননা, অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর দেশের উন্নয়ন ও বাজেট বাস্তবায়ন নির্ভর করে। দ্বিতীয়ত, রি-প্রাইসিং বা দর পুনর্নির্ধারণ। কেননা, পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক-কর যে হারে আরোপ করা হয়, তার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের দাম ওঠানামা করে। যেমন: সিগারেটের ওপর বেশি শুল্ক-কর ধার্য করলে দাম বাড়বে। ভোজ্য তেল আমদানির ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট কমালে দাম কমবে। তৃতীয়ত, রি-ডিস্ট্রিবিউশন অব ওয়েলথ বা সম্পদের পুনর্বণ্টন। এনবিআর রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বিরাজমান সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য হ্রাস করে। আয়কর আদায়ের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বৈষম্য কমানো হয়। বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে কর অন্যতম পদ্ধতি। ফলে সম্পদের সমতা নিশ্চিত হয়। সহজ ভাষায় বললে, ধনীর কাছ থেকে কর নিয়ে গরিবকে দেওয়া হয়। যার আয় বেশি, তার কর বেশি এমন অনুপাতে কর আদায় করা হয়। এভাবে সমতা বিধান করা হয়। চতুর্থত, রিপ্রেজেনটেশন বা প্রতিনিধিত্ব। অর্থাৎ যারা কর দেন রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের এক ধরনের মালিকানা গড়ে ওঠে। যে ব্যক্তি কর দেন না, তার মালিকানা থাকে না। আবার এনবিআরই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যার নীতিসমূহ জাতীয় সংসদ পাস করে। সংসদের অনুমোদন ছাড়া সরকার কোনো ধরনের কর আরোপ বা কর বৃদ্ধি করতে পারে না। দেশের সংবিধানে সংসদকেই একমাত্র কর আরোপের অধিকার বা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সে জন্য প্রতিনিধিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।