১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তানে পরিণত করার নীলনকশা। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষমতাসীন তৎকালীন সরকারগুলো যে আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছিল সেটি প্রমাণ করে যে তারা সবাই পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী, হত্যাকারীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা খন্দকার মোশতাককে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি পদে বসায়। এটি ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের একটি সাময়িক অবস্থান। খন্দকার মোশতাককে দিয়েই নেপথ্যের শক্তি সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে প্রথম বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে খন্দকার মোশতাককে দিয়ে ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মামলা ও বিচার রুদ্ধ করার জন্য দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। মোশতাক সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়া শুরু হলে ক্ষমতা দখল, জেলহত্যা এবং মোশতাককে সরিয়ে দিয়ে নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীরা ক্ষমতা নিজেদের হাতে গ্রহণ করে। দেশে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে বিদ্রোহ, পাল্টা অভ্যুত্থান ও প্রতিহত করার নানা ঘটনা অন্তরালে সংগঠিত হয়। ক্ষমতা রাজনৈতিকীকরণের ঢাল হিসেবে উর্দি ছেড়ে রাজনৈতিক প্রলেপ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি পদ, সংসদ নির্বাচন ছিল নেপথ্যের শক্তির একটি সাজানো রোডম্যাপ। অবশেষে গঠিত তথাকথিত সংসদে ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল তারিখে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে সংযুক্ত করা হয় দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি। ফলে ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ করে রাখা হয়।