অনেকেই মনে করছেন যে তালেবান গত শতকের '৯০-এর দশকের মতো আবারও শরিয়া আইনভিত্তিক প্রশাসন চালু করবে। প্রায় বিশ বছর পর, আজকের তালেবান চেতনা ঠিক কোন স্তরে বিরাজ করছে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তালেবানের চিন্তাধারা, রাজনৈতিক চেতনা ও কূটনৈতিক তৎপরতা ও কলাকৌশল বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে যে পরিবর্তন হয়েছে তা বোঝা যায়।
আমরা লক্ষ্য করেছি তালেবানের শীর্ষনেতারা আফগান-শান্তি আলোচনায় যোগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, চীন ও ভারতের সঙ্গে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে মতবিনিময় ও নিজেদের সন্ত্রাসী পরিচয় থেকে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতিস্থাপনে উদগ্রীব ছিল। এমন কি ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাবেক সিআইএপ্রধান পম্পেইয়ের সঙ্গে চুক্তি করে কথা দিয়েছিল যে, ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের আশ্রয়স্থল হবে না আফগানিস্তান। পরোক্ষে, আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল রাশিয়া। সেটি বোঝা যায় ভদ্মদিমির পুতিনের বক্তব্য থেকেই। পুতিন আফগান প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলোর নীতি-আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতাকে পরিত্যাগ করতে বলেছেন। আফগান তালেবান তাদের রাজনৈতিক অধিকার নিজেদের মতো করে করুক, সেখানে নাক না গলানোর কথা জোরের সঙ্গেই বলেছেন। তার মানে পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া গণতন্ত্র নয়, আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। চীনের সমর্থনের পর রাশিয়ার এই পরোক্ষ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই বক্তব্য অবশ্যই বৈশ্বিক রাজনীতির দুটি ভাগকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা তালেবান শাসিত আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেবে না। ঠিক এরই জবাব এলো রাশিয়ার কাছে থেকে। ফলে ইউরোপ স্বীকৃতি না দিলে যে সব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংকটের মুখে পড়তে হতো আফগানিস্তানকে, রাশিয়া ও চীনের সমর্থনের পর তা নতুন বৈশ্বিক মাত্রা পেলো। আমরা দেখছি অর্থনৈতিক বিশ্বের ক্ষমতা এখন এশিয়ার দূরপ্রাচ্য ও পশ্চিমপ্রাচ্যের দোরগোড়ায়। অর্থনৈতিক মেরুকরণের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে এশিয়া। সে দিকটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।