স্কুলের নিচের শ্রেণিতে আপনারা-আমরা সবাই শিখেছিলাম পদার্থ তিন প্রকার : কঠিন, তরল ও বায়বীয়। অবশ্য আমাদের বগুড়া জিলা স্কুলের ক্লাস সিক্সের (১৯৫১ সাল) ক্লাস টিচার অখিলবাবু তাঁর ক্লাসে আরো একপ্রকার পদার্থের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তার নামকরণ করেছিলেন ‘অপদার্থ’। কোনো ছাত্র স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিতে মুহুর্মুহু ব্যর্থতার পরিচয় দিলে তাকে তিনি অপদার্থ অভিধায় অভিহিত করতেন। আর আজ সত্তর বছর পর অতি সম্প্রতি লকডাউনের বদৌলতে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও আমরা কঠিন, তরল ও বায়বীয়—এই তিন প্রকারের ব্যবস্থাপত্রের কথা জানলাম। অবশ্য লকডাউন, ভাইরাস, করোনাভাইরাস, কভিড-১৯, মাস্ক—এসব শব্দও সব দেশের, সব মানুষের কাছে এই সেদিনও অপরিচিতই ছিল বলা যায়। আমরা লকডাউন নয়, থানার যে প্রকোষ্ঠে অপরাধীদের রাখা হয় সেই লকআপ, যার বাংলা নাম হাজত, গারদ বা ফাটক—ওটাকে চিনি সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। কল-কারখানায় যে লকআউট ঘোষণা করা হয় তা-ও জানি। কিন্তু লকডাউন? না, শব্দটির সঙ্গে কোনো কালে সাধারণ বাঙালির পরিচয় ছিল বলে মনে হয় না। আর ইংরেজি মাস্ক নয়, বাংলা মুখোশ পরে ডাকাতরা ডাকাতি করত বলে জানতাম। গত বছর থেকে আমাদের দেশে লোকে মুখোশ না পরে সরকারি হুকুমে মাস্ক পরতে শুরু করেছে। পুলিশ রিকশা থামিয়ে রিকশাচালক ও আরোহিণী কাজের বুয়াকে মুখোশ নয় মাস্ক কেন পরেনি তাই নিয়ে তম্বি করে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে বাংলা অভিধানে শিগগিরই মুখোশ শব্দের অর্থ লেখা হবে মাস্ক। অথবা ইংরেজি শব্দ টেবিল, চেয়ার, পেনসিল ইত্যাদির পাশাপাশি ‘মাস্ক’ শব্দটিও বাংলা অভিধানে স্থায়ী জায়গা করে নেবে।