রাজনীতিবিদ অনেকেই হন। অনেকেই জনকল্যাণে আজীবন নানাবিধ ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গও করে থাকেন। জনকল্যাণে নিজের জীবনের সবটা বিলিয়ে দেওয়া রাজনীতিবিদের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু 'স্টেটসম্যানশিপ' বা রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণ পাওয়া যায় খুব কম সংখ্যক রাজনীতিবিদের মধ্যে। এই রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণসম্পন্ন বা রাষ্ট্রনীতিক রাজনীতিবিদদের হতে হয় মেধাবী, প্রজ্ঞাসম্পন্ন, চিন্তাশীল, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। সবচেয়ে বড় গুণ 'রাষ্ট্র'কে বুঝতে হয়। রাষ্ট্র যে সর্বতোভাবে একটা সিস্টেম, সেটাকে নির্মাণের প্রতীতি খুব দরকার হয়। রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে যে সুনীতি, সুশাসন দরকার- সেই প্রত্যয়ও থাকতে হয় স্টেটসম্যানদের। রাষ্ট্রে নীতি ও নিয়ম প্রয়োগে নির্মেদ নির্মোহতাও জরুরি। 'আইন বা নিয়ম সবার জন্য সমান'- এটা বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কঠোরতাও দরকার হয় ভীষণ। স্বজনপ্রীতি পরিহার করার মতো নৈতিক গুণ না থাকলে রাষ্ট্রনৈতিকতা অর্জন করা যায় না। এসব কঠোর-কঠিন গুণ থাকলেও আজীবন তা বাস্তবে প্রয়োগ করা খুব সহজ কাজ নয়। ফলে, ভালো রাজনীতিবিদ পেলেও রাষ্ট্রনায়ক সব দেশে সবকালে পাওয়া সহজ নয়। আনন্দের বিষয়, এই ভূখণ্ডে আমরা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে এসব গুণের সমাবেশ লক্ষ্য করি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে, বঙ্গবন্ধুর নামে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের কর্মযজ্ঞের মধ্যে এই রাষ্ট্রনৈতিকতার ছাপ সুস্পষ্ট।