২০২০ সালের মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে কোভিড-১৯-এর কারণে দেশের প্রায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হেফজখানা, কওমি মাদ্রাসা এবং বিশেষ কিছু কোচিং সেন্টার প্রশাসনের দৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন চলেছে। কিছুদিন আগে তা সরকারের দৃষ্টগোচর হওয়ায় কওমি মাদ্রাসা ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করা গেলেও হেফজখানা বন্ধ করা যায়নি। সরকার শুরু থেকেই করোনার সংক্রমণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে। তবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া সচল ও অব্যাহত রাখার জন্য টেলিভিশন প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণির কিছু বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার ভিডিও ধারণ ও প্রচার করার ব্যবস্থা করেছে। সংসদ টিভি চ্যানেলটি এসব অনুষ্ঠান প্রচার করে আসছে। সব বিষয়ের সব লেকচারই যে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি ধরে রাখতে বা আকর্ষণ করতে পারছে তেমনটি নয়।
কারণ দূরশিক্ষণের মিডিয়া প্লাটফর্মের মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ের শ্রেণিপাঠ দেওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ দেশের কোনো পর্যায়ের শিক্ষকেরই নেই, সে ধরনের উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ের আগে ছিল না। সে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর যখন সংসদ টিভি ব্যবহার করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক লেকচার ভিডিওকরণ ও সম্প্রচার জরুরি হয়ে পড়ে তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছিল সেটি অপেক্ষাকৃত মন্দের ভালো বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু উন্নত দুনিয়ায় বহু আগেই অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাঠক্রম চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে উন্নত দুনিয়ার দেশগুলো অন্তত দুই দশক আগ থেকেই শ্রেণিপাঠের পাশাপাশি অনলাইন পাঠদানের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। সেই সব দেশের শিক্ষকরা শ্রেণি পাঠকে অনলাইন মাধ্যমে কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আকর্ষণীয় করতে হয়, শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করতে হয়, তাদের নানা ধরনের মূল্যায়ন, অ্যাক্টিভিটিজ, পরীক্ষা, ল্যাব সংক্রান্ত প্রায়োগিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, টিউটোরিয়াল ও নানা ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত থাকে। সেসব দেশে এখন এটি একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন মাধ্যম সরাসরি সম্পর্ক বজায় রাখতে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটায় না। শ্রেণিপাঠের পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত দুনিয়ায় স্বাভাবিক অভ্যস্ততায় পরিণত হয়েছে।