সিলেটে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২১, ০০:০০

ভোটযুদ্ধের আগে সিলেটে হাবিব-আতিক লড়াই জমে উঠেছে। হাবিবের পিছু ছাড়ছেন না আতিক। ইসিতে আপিল খারিজের পর তিনি আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এ লড়াইয়ের দিকে চোখ রাখছেন ভোটাররাও। চোখ রাখছেন আতিকের গতিবিধির ওপরও। সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে এরই মধ্যে নানা নাটকীয়তা ঘটেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এক সময়ের যুক্তরাজ্য ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। এ আসনের সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মনোনয়ন নিয়ে লড়াই করছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব। এলাকা এবং দলের ভেতরে প্রয়াত এমপির অবস্থান সুসংহত থাকায় হাবিব সুবিধা করতে পারেন নি। তবে- তিনি মাঠ ছাড়েননি। ভোটের মাঠে হাবিব এক যুগ ধরে রয়েছেন সক্রিয়। গত মার্চ মাসে হঠাৎ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর এ আসনে উপনির্বাচনের ঢাকঢোল শুরু হয়। সক্রিয় হয়ে ওঠেন হাবিবুর রহমান হাবিব। কিন্তু এমপি হতে এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত দেড় ডজন নেতা ভোটের মাঠে নামেন। তাদের সঙ্গে লড়াই করে নৌকার প্রার্থী হন হাবিব। তার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটের মাঠে নামছেন। সিলেট-৩ আসনে দলের মধ্যে প্রকাশ্য কোনো বিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে শক্ত অবস্থানে থেকেই হাবিবুর রহমান হাবিব এ আসনে ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রয়াত এমপির স্ত্রী প্রকাশ্য ঘোষণা না দিলেও ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ হাবিবের পক্ষে প্রচারণায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ৯১ সাল থেকে সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন করছেন আতিকুর রহমান আতিক। তিনি জাতীয় পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য। একটানা নির্বাচনে অংশ নিলেও এখনো ভাগ্য তার সহায় হয়নি। এক সময়ে এ আসনটি ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। জাতীয় পার্টির প্রবীণ নেতা ও সাবেক এমপি আব্দুল মুকিত খান দীর্ঘদিন এ আসন শাসন করেছেন। তার শাসনের সময়েই আতিক এ আসনে নির্বাচনে নামেন। প্রথমে দলের ভেতরে তিনি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন। মুকিত খান অনেক আগেই রাজনীতি থেকে নীরব হয়ে পড়লেও আতিকুর রহমান আতিক পরবর্তীতে মুকিত খানের মতো দাপট দেখাতে পারেন নি। এমপি হতে না পাড়ার কারণে তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারেন নি। আতিক নিজেও মনে করছেন এবার তার জন্য ভালো একটি সুযোগ রয়েছে। দলছাড়া শফি চৌধুরী বিদ্রোহী হওয়ার কারণে শক্তিহীন হয়ে পড়েছেন। হাবিব নবাগত প্রার্থী। ফলে তিনি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে ভোটের মাঠে রয়েছেন তার জন্য ভালো সুযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় আতিকুর রহমান আতিক চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে নামার আগে ‘কৌশলী’ হয়ে উঠেছেন। নৌকার প্রার্থী হাবিবের মনোনয়নের বৈধতার প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের ইস্যুতে তিনি কাঁপিয়ে তুলেছেন ভোটের মাঠও। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ভোটাররাও হাবিবকে নিয়ে ছিলেন দোলাচলে। আতিকুর রহমান আতিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হাবিব দ্বৈত নাগরিক। এ বিষয়টি সংবিধানের আলোকে প্রার্থী হওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এই চ্যালেঞ্জে তিনি এখনো রয়েছেন। এখন তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে- আতিকুর রহমান আতিক গত ২০শে জুন হাবিবুর রহমান হাবিবের মনোনয়নের বৈধতা নিয়ে আপিল করেছিলেন। মঙ্গলবার তার আপিলের বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে শুনানি হয়। গতকাল নির্বাচন কমিশন তার আপিলের আবেদন খারিজ করেছেন। ফলে হাবিব এখন সিলেট-৩ আসনের বৈধ প্রার্থী। আতিকের এই আইনি লড়াইয়ের মোকাবিলা করতে হচ্ছে হাবিবকে। তিনি ঢাকায় সশরীরে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে তার জন্য আইনি লড়াই চ্যালেঞ্জের বিষয়। সিলেট-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। তিনি সিলেটের পরিচিত রাজনীতিবিদ। ১৯৮৬ সাল থেকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাও তিনি। এবারের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে ভোটাররা ধরেই নিয়েছিলেন শফি আহমদ চৌধুরী প্রার্থী হবেন না। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠে নামেন শফি আহমদ চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার মনোনয়নপত্রও বৈধ হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটযুদ্ধে নামার কারণে ইতিমধ্যে শফি আহমদ চৌধুরীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শফি চৌধুরীও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি ভোটে থাকবেন। এবারের নির্বাচনে শফি আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে নেই বিএনপি নেতারা। দল নির্বাচনে না থাকায় তারাও নির্বাচনে নামছেন না। তবে শফি আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন- বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা তার সঙ্গে রয়েছে। যেদিকে যাচ্ছেন বিএনপি তণমূল নেতাসহ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছেন। তিনি সিলেট-৩ আসনের ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছে দেয়া ও একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের মাঠে নামছেন। ভোটের আগে সিলেট-৩ আসনে ত্রয়ী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও শেষ মুহূর্তে যেকোনো দুইজন প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন। নৌকার প্রার্থী হিসেবে হাবিব থাকবেন মূল লড়াইয়ে। তারা জানিয়েছেন, আতিকের দলীয় পরিচিতি থাকায় তিনি এখনো শফি চৌধুরী থেকে এগিয়ে আছেন। তবে, শফি চৌধুরী ভোটের মাঠকে কাজে লাগাতে পারলে তার পক্ষে লড়াই করা সম্ভব হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us