বর্তমান মাইজদীকোর্ট শহর দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না তখন ওই জেলা শহরটি দেখতে কেমন ছিল। শহর তো নয়, যেন বর্তমান শহরের কঙ্কাল। আসলে উনিশ শ চল্লিশের দশকের শেষভাগে মেঘনার তীরে অবস্থিত সেই আমলের উভয় বাংলার সেরা সুন্দরী নগরীদের অন্যতম ছিল নোয়াখালী। শহরটি মেঘনার ভাঙ্গনে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১২-১৪ মাইল উত্তরে মাইজদীতে স্থানান্তরিত হয় জেলা সদর। অফিস-আদালত, স্কুল, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় সবই গড়ে ওঠে মাইজদীতে। আর যেহেতু কোর্ট-কাচারি স্থাপিত হলো মাইজদীতে, তাই ওই জনপদের নামের সঙ্গে ‘কোর্ট’ সংযুক্ত হয়ে এই নবপ্রতিষ্ঠিত শহরের নাম হয়ে গেল মাইজদীকোর্ট। আর দিন গুজরানের মতো টিনের চাল, টিনের/তরজার বেড়া, কোথাও খড়ের চাল তরজার বেড়ার বাড়ি-ঘর-দুয়ার উঠল সেই নিরাভরণ সদ্যোজাত শহরে। বাস্তুভিটার মাটির প্রয়োজনে শহরের বুক চিরে কাটা হলো খাল, আর এখানে-সেখানে খনন করা হলো পুকুর।
মেঘনাগর্ভে হারিয়ে যাওয়া নোয়াখালীসুন্দরীর সে কী করুণ পরিণতি। পঞ্চাশের দশকে দু-চারটি আধাপাকা সরকারি স্থাপনা ব্যতীত বাটি চালান দিয়েও সারা শহরে ইট-পাথরের ঘরবাড়ি খুঁজে পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ। আর লোকসংখ্যা? কত আর হবে, আন্দাজ করি বড়জোর হাজার পঁচিশেক। বর্তমানে যে মাইজদীকোর্ট নামক সুপরিকল্পিত, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শহরটি গড়ে উঠেছে তার যাত্রা শুরু হয়েছে তো এই সেদিন : বোধ করি ষাটের দশকে বা তারও পরে। পঞ্চাশের দশকে হৃতসর্বস্ব মাইজদীকোর্ট শহরটি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা উদ্গত দীর্ঘনিঃশ্বাস চেপে বাষ্পাকুল নয়নে নিশ্চয়ই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। অন্তত আমি তো পড়ি। ১৯৫৪-৫৬ সময়কালে দুই বছর মাইজদীকোর্ট শহরের বাসিন্দা ছিলাম আমরা। আমি টিনের চালবিশিষ্ট আধাপাকা একতলা এল-প্যাটার্নের নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ৫৬ সালে ম্যাট্রিক—বর্তমান এসএসসি পাস করি। আজকের নিবন্ধের শুরুতে সামান্য স্মৃতিরোমন্থন সেই সময়কার।