বিশ্বে রোববার পালিত হয়েছে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে। মিয়ানমারে সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এদিন প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে ‘ইস্টার এগ’ কে বেছে নিয়েছিলেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীরা।
গত ২৭ মার্চ মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে জান্তাবাহিনীর গুলিতে ১১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়। যা গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনাঅভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সব থেকে রক্তাক্ত দিনে পরিণত হয়েছে।
ওই দিনের পর বিক্ষোভকারীরা বড় বড় নগরী ছেড়ে ছোট ছোট শহরগুলোতে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ করছিল। যদিও তাতেও রক্তঝরা থামেনি। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বিক্ষোভকারীদের প্রাণ গেছে।
মিয়ানমারে ৪০ সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
জান্তা শাসনের বিরোধিতা করায় মিয়ানমারে প্রায় ৪০ জন সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই দলে সামাজিক মাধ্যম তারকা, সংগীতশিল্পী ও মডেল রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
মিয়ানমারে মৃত্যুসংখ্যা সাড়ে পাঁচ শ ছাড়াল
মিয়ানমারে সামরিক শাসনবিরোধী প্রায় দুই মাসের বিক্ষোভে মৃত্যুসংখ্যা সাড়ে পাঁচ শ ছাড়িয়েছে। অধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এই তথ্য জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
এএপিপি জানায়, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৫৫৭ হয়েছে। গ্রেপ্তার বা আটক ব্যক্তির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।
মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র-মানবাধিকারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে এএপিপি।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধে রূপ নিচ্ছে?
অভ্যুত্থানের আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। সার্বিক পরিস্থিতিও সেদিকেই ইঙ্গিত করছিল।এ কারণে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে সময় লাগেনি মিয়ানমারবাসীর।প্রতিবাদে দ্রুতই রাস্তায় নেমে আসে তারা।অন্যদিকে ক্ষমতার প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয় তাতমাদোও (মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম)।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েই বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।ফলে প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে মিয়ানমারের রাজপথে।
তাতমাদো মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে গত ১ ফেব্রুয়ারি।এর পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫৫০ জনের।এর পরও বিক্ষোভকারীদের দমন করতে পারছে না তাতমাদো।শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন এগোচ্ছে মারাত্মক এক সংঘাতের দিকে।দেশটির বিভিন্ন আঞ্চলিক জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীদের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্তকরেছে। নিজ নিজ এলাকায় পুলিশ ও সেনাচৌকিগুলোয় আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে তারা।এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলের আশঙ্কা, শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত রূপ নিতে পারে ভয়াবহ ও সর্বাত্মক এক গৃহযুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নভাবে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও।
মিয়ানমারে ইন্টারনেট পরিষেবা আরও সীমিত করল জান্তা সরকার
মিয়ানমারে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে জান্তা সরকার। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর এর প্রতিবাদে দেশটিজুড়ে প্রতিদিন রাস্তায় নামছে হাজারও মানুষ। এর মধ্যেই ইন্টারনেট পরিষেবায় লাগাম টানার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ আনতে চাচ্ছে সেনা সরকার।