২০১৭ সালে ব্রিটেনের একটি সমীক্ষায় রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে এমন লোকের সংখ্যা দেখা গিয়েছিল মাত্র শতকরা ৫ জন। অর্থাৎ একেবারে আস্থার তলানিতে ছিলেন রাজনীতিবিদরা। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, এ সমীক্ষা যদি সঠিক হয়, তাহলে রাজনীতিবিদদের জনসভায় এত লোক আসে কোথা থেকে? তা ছাড়া রাজনৈতিক নেতার বাসায় তো কর্মীর ভিড় লেগে থাকে। এই মানুষেরা কি রাজনীতিবিদদের পছন্দ করেন না? এর উত্তরও কিন্তু একটু বাঁকাভাবে হলেও ওই সমীক্ষায় ছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল, রাজনীতিবিদদের প্রতি মাত্র ৫ ভাগ লোকের আস্থা থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রতি আস্থা ২০ ভাগ লোকের। এর অর্থ কিন্তু একেবারে সোজা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কোনো না কোনো ক্ষমতা থাকে। তার কাছে দরকার হয়। আর সে কারণে তার প্রতি আস্থা রাখেন ২০ ভাগ মানুষ। এ আস্থা যে কেবল তার কাছে প্রয়োজন আছে বলেই, তারও প্রমাণ কিন্তু একটু খেয়াল করলে পৃথিবীর সব দেশের জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। অর্থাৎ যতক্ষণ তিনি জনপ্রতিনিধি আছেন, ততক্ষণ তার পিছে পিছে মানুষ হাঁটছেন, তার অফিস বা বাসায় মানুষ যাচ্ছেন। কিন্তু যেই তিনি জনপ্রতিনিধি থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন, তখনই দেখা যাচ্ছে ওই ২০ ভাগ মানুষও তার কাছে যাচ্ছেন না।
যেমন এই বাংলাদেশেই অনেক মন্ত্রীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যখন তার গাড়িতে পতাকা আছে, তখন ঈদের দিনে তার বাড়িতে মানুষের স্রোত। জন্মদিনে ফুলের ডালি নিয়ে আসছেন শত শত মানুষ। আর যেদিন তাকে কেবিনেট থেকে বাদ দেয়া হয়, সেদিনই দেখা যায় তার বাড়ি জনশূন্য হতে শুরু করে। আর যখনই জনপ্রতিনিধি থাকেন না, তখন নিকটাত্মীয়ও অনেকে ঈদের দিনে তার বাড়ি আসেন না। যদিও এ ঘটনা এখন আমাদের বাংলাদেশে সরকারি দাপুটে কর্মকর্তাদের বেলায়ও দেখা যাচ্ছে। কারণ, যেকোনো কারণেই হোক, অন্য যেকোনো সময়ের থেকে বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তারা অনেকে বেশি ক্ষমতাশালী। এমনকি কোনো কোনো উপজেলায় পুলিশপ্রধান ওই নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধির থেকেও ক্ষমতাশালী। কেন এমনটি হয়েছে, তা বিস্তারিত এ লেখার বিষয় নয়। তবে এখানে উদাহরণ হিসেবে আনতে হলো এ কারণে যে রাজনীতিবিদদের অবস্থান কোথায় চলে যাচ্ছে, সেটা দেখানোর জন্য।