করোনায় মুজিববর্ষেও চালু হচ্ছে না চট্টগ্রাম বন্দরের পিসিটি
প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
করোনা সংক্রমণের কারণে মুজিববর্ষেও চালু হচ্ছে না চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল কাঙ্ক্ষিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। প্রথম দফায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছিল। ফলে দ্বিতীয় দফায় মুজিববর্ষে এই পিসিটি চালুর ঘোষণা করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অথচ এখনো পর্যন্ত এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের কারণে নির্মাণকাজে নেমে আসে ধীরগতি। এ অবস্থায় পিসিটি চালু করতে আরো দেড় বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক। ওমর ফারুক জানান, মুজিববর্ষে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কাজ শেষ করে অপারেশনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে ক্রমশ সব ধরনের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। সেই প্রভাব পিসিটির নির্মাণ কাজেও পড়ে। ফলে পিসিটির কাজ গত ৫ মাস ধরে চলছে ধীরগতিতে। তাই মুজিববর্ষের মধ্যে পিসিটির কাজ শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, পিসিটির সার্বিক নির্মাণকাজ এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশের মতো শেষ হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপর পিসিটি অপারেশনাল কাজে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ করা হচ্ছে। বোট ক্লাবের কাছে বিমানবন্দর সড়ক সোজা করা এবং কয়েকটি স্থাপনা সরিয়ে ৩২ একর জায়গায় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বিআরটিসি ও বুয়েট প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১৭ সালের ২৩শে নভেম্বর এ কাজের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ সমঝোতা স্মারক হয়। ২০১৮ সালের ২০শে জানুয়ারি সেনাবাহিনীর কাছে প্রকল্পের কাজ হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফেব্রুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী প্রকল্পের কাজ শুরু করে। অর্থাৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করতেই চলে যায় ৬ মাস। ফলে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি মুজিববর্ষে শেষ করে অপারেশনাল কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, বন্দরের পিসিটি প্রকল্পে ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটির নির্মাণকাজ চলছে। যেখানে ৩টি জাহাজ বার্থিং করতে পারবে। এছাড়া ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি রয়েছে। এছাড়া থাকছে এক লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং রাস্তা। ২১২৮ বর্গমিটার কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন শেড (সিএফএস), ৬ মিটার উচ্চতার ১৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫৫৮০ পোর্ট অফিস বিল্ডিং, ১২০০ বর্গমিটার যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৪ লেন বিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিমি. এবং ৬ লেন বিশিষ্ট ১ কিমি. রাস্তা স্থানান্তরপূর্বক পুনঃনির্মাণ, সিকউরিটি পোস্ট, গেস্ট হাউজ, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেড। এছাড়া টার্মিনাল পরিচালনা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে থাকবে ২টি ফায়ার ট্রাক, ১টি ফায়ার কার, ৩টি নিরাপত্তা পেট্রোল কার, ১টি এম্বুলেন্স, ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন, ৪টি স্ট্রাডেল কেরিয়ার, ৪টি রিচ স্ট্যাকার, ৮টি রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), ৪টি লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, ৪টি ফর্ক লিফট, ১টি রেইল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি), ২টি টাগ বোট, ২টি পাইলট বোট এবং ২টি ফাস্ট সিপড বোট। যা সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ও পণ্য হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে। এ কারণে পিসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে বহুল কাঙ্ক্ষিত প্রকল্পের একটি।