দীর্ঘদিন পরকীয়া, হত্যার নাটক সাজিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা খেলেন প্রেমিক-প্রেমিকা। পালিয়ে যাওয়ার আগে হত্যাকাণ্ডে রূপ দেয়ার জন্যই নিজের চুল, ব্লেড ও কিছু রক্ত বাথরুমে ফেলে যায় তিন সন্তানের জননী খাদিজা বেগম। ঘটনার পরপরই ওই বাড়িতে শত শত লোক ভিড় করে। এটি খুন নাকি নিখোঁজ এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমোলোচনার ঝড় উঠে। অনেকে এটাকে রহস্যজনক ঘটনা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। এরপরই স্ত্রীর পরিবার থেকে হত্যার অভিযোগ ওঠে স্বামী সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় খাদিজার স্বামী সোহেল, শ্বশুর হুমায়ুন কবীর এবং শ্বাশুরী হেলেনা বেগমকে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একদিন পর তাদের ছেড়ে দেয়। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর দক্ষিণ পাড়ায়। এ ঘটনায় তিন সন্তানের জননী খাদিজা ও কথিত প্রেমিক আনোয়ার হোসেনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর আগে আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার হুমায়ুন কবীরে ছেলে সোহেলের সঙ্গে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার চিলিকূট এলাকার আবুল কাসেম মিয়ার মেয়ে খাদিজা বেগমের। বিয়ের ১০ বছরে এ দম্পতির তিন সন্তান জন্ম নেয়। স্বামীর ব্যবসার কারণে বিয়ের পর থেকেই নরসিংদীর রায়পুর উপজেলা আলগি বাজারের পাশে বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করেন এই দম্পতি। কিন্তু ৭ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় খাদিজার সঙ্গে ফেনীর দাগনভূঞার ইয়ার নুরুল্লাহপুর গ্রামের আবুল বাসারের ছেলে আনোয়ার হোসেনের। দীর্ঘ প্রেমের পর গত ২রা আগস্ট বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় খাদিজা। পালিয়ে যাওয়ার সময় খাদিজা বেগম নিজের চুল কেটে, একটি ব্লেড ও কিছু রক্ত বাথরুমে রেখে বাড়ি থেকে পালায়। রাতে শিশুর কান্নার শব্দ শুনে স্বামী স্ত্রীকে অনেক ডাকাডাকি করলেও আর পাওয়া যায়নি। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে এ ঘটনায় খাদিজার স্বামী সোহেল, শ্বশুর হুমায়ুন কবীর এবং শ্বাশুরী হেলেনা বেগমকে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেয়। পুরো ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটির কোনো ক্লু খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ নানা দিক নিয়ে কাজ শুরু করে। পুলিশের একাধিক টিম চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি উদ্ঘাটনের জন্য মাঠে কাজ শুরু করে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি বাড়ি থেকে আটক করে। আটকের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ স্বামী ও তিন সন্তানকে খাদিজার সামনে আনলে স্বামী ও সন্তানদের অস্বীকার করে খাদিজা। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন আসল ঘটনা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খাদিজা আরো জানান, প্রায়ই বাবার বাড়ির কথা বলে কথিত প্রেমিক আনোয়ারের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেখা করতো। গত ঈদুল ফিতরের পর কথিত প্রেমিক আনোয়ারের সাথে হজুর দিয়ে বিয়েও বসেন খাদিজা। কিন্তু বিষয়টি স্বামী সোহেল মিয়া জানতেন না। তবে বাথরুমের পাশে চুল, রক্ত ও ব্লেড রাখার বিষয়ে খাদিজা বলেন, হত্যাকান্ডের রুপ দেয়ার জন্য নিজের মাথার চুল ও কোরবানীর গরুর রক্ত ও ব্লেড রেখেযান জানান খাদিজা। পুলিশ জানায়, তাদের অনেক খোজাখুজির পর তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে খাদিজার স্বামী সোহেল মিয়া বাদী হয়ে কথিত প্রেমিক আনোয়ার হোসেনকে প্রধান আসামী ও স্ত্রী খাদিজাকে দ্বিতীয় আসামীকে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। শুক্রবার সকালেই তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার হোসেন জানান, খাদিজা বিবাহিত ও তার তিন সন্তান রয়েছে সে বিষয়টি জানতো না। এবং তাকে খাদিজা জানিয়েছে সে অবিবাহিত। এ জন্যই তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক করেন আনোয়ার। তবে হুজুর দিয়ে বিবাহ হলেও আদালতে গিয়ে বিবাহ করতে চাননি খাদিজা। পুলিশের কাছে আটক হওয়ার পর জানতে পারেন ভোটার আইডি কার্ডে স্বামীর নাম থাকায় সে আদালতে বিবাহ করতে রাজি হননি। তবে খাদিজা জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর সংসার থেকে চলে গেছেন তিনি। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রার্প্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমদু জানান, বিষয়টি খুবই চাঞ্চাল্যকর ছিল। এবং সিনেমাকেও হার মানাবে। তাদের উদ্ধার করে জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।