পেশাদারিত্ব ও সততার এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘শেরপা’

বণিক বার্তা প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২০, ০৯:০০

হঠাৎ করেই চলে গেলেন। ঘণ্টা দুয়েক আগেও ভাবির সঙ্গে কথা বলেছি। জানালেন আইসিইউতে যাওয়ার আগেও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাই আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। নিশ্চয় তিনি আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশেই চলে গেলেন। মাত্র ক’দিন নিকটাত্মীয়সহ কত আপনজনকেই না হারালাম। করোনার আঘাতে হঠাৎ চলে যাওয়া এই নিয়ে আমার অন্তত তিনজন প্রিয় মানুষের স্মরণকথা লিখতে হলো। এ যে কী কষ্টের, তা কাউকে বোঝাতে পারব না। কাজেমী ভাইকে নিয়ে এমন করে লিখতে হবে, তা আমার কল্পনায়ও আসেনি।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রণোদনা কর্মসূচি, বাজেট এবং অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে আলাপ করলাম। এরপর কয়েকবার আমার লেখার ওপর মন্তব্যও পাঠালেন। আরো কী কী বিষয়ের ওপর বাড়তি আলো ফেলা উচিত, সেসব পরামর্শও দিলেন। পরামর্শ তিনি আমাকে সর্বদা অকাতরেই দিতেন। আমার ধারণা, যারাই তার সঙ্গে কাজ করেছেন, সব গভর্নরকেই তিনি তা দিয়েছেন। আমার বড়ই সৌভাগ্য যে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে আমি তা পেয়েছি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলে এলেও তার এই পরামর্শের ধারা থেকে আমি বঞ্চিত হইনি।২০০৯ সালের ৩ মে বাংলাদেশ ব্যাংকে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়ার কয়েক দিন আগেই তার সঙ্গে দেখা হলো ল্যাবএইড হাসপাতালে। ঘোষণা দেয়া হলেও আমি তখনো গভর্নর নই।

শুনলাম কাজেমী ভাই বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে। তাই ছুটে গিয়েছিলাম তাকে দেখতে। বললেন, সামান্য ব্যথা। ঠিক হয়ে যাবে। দুশ্চিন্তার কারণ নেই। মুখে যা-ই বলুন না কেন, খানিকটা দুশ্চিন্তা নিয়েই ঘরে ফিরলাম। সপ্তাহ খানেক বাদে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করলাম, ঠিকই তাকে সহাস্যবদনেই পেলাম। খুবই আশ্বস্ত হলাম। কত পুরনো পরিচয়।ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয়। সেটি ১৯৭৬ সালের কথা। তখন তারা দিলকুশায় উত্তরা ব্যাংকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। আমি পাশেই মতিঝিলের আদমজী কোর্টে বিআইডিএসে কাজ করি। তাই মাঝে মধ্যেই দেখা হতো। আমার অনেক বন্ধুই তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে সদ্য ঢুকেছে।

পরিচয়ের শুরু থেকেই এই বুদ্ধিদীপ্ত মেধাবী মানুষটির সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছিলাম তিনি অন্য ধাতের এক মানুষ। পদার্থবিদ্যার চৌকস ছাত্র কাজেমী ভাই আমাদের খানকিটা সিনিয়র। জিয়া অনায়াসে তাকে তুমি বললেও আমি পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই বড়ই থেকে গেলেন আজীবন। তিন বন্ধুই ডেপুটি গভর্নর। পরে আরেকজন যুক্ত হলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম। হঠাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ আসনে বসে বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জের মধ্যেই পড়ে গেলাম। যদিও এর আগে সোনালী ব্যাংকে পরিচালক ও জনতা ব্যাংকে চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। তার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং আমার অজানাই ছিল। বন্ধুদের সহযোগিতা ছাড়াও যে মানুষটিকে দেখে সবচেয়ে আশ্বস্ত বোধ করেছিলাম, তিনি ছিলেন কাজেমী ভাই।

খুবই প্রাইভেট মানুষ। যেন সাধু-সন্ন্যাসী। কখনোবা নিবেদিত গবেষক কিংবা শিক্ষক। টলস্টয় থেকে রবীন্দ্রনাথে অবাধ বিচরণ। বিদেশী আর্থিক সাময়িকীর প্রাসঙ্গিক লেখা পেলেই সযত্নে সংরক্ষণ করতেন আমার জন্য। প্রিয় ছাত্রকে যেমনটি তৈরি করেন পণ্ডিত শিক্ষক, তেমনি পরম যত্নে তিনি আমাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের পালাবদলের বাঁকগুলোর সঙ্গে আমাকে পরিচিত করে তুলতে থাকলেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থায়নের চিন্তার সঙ্গে তিনিই আমাকে পথ দেখালেন। একেবারে শুরুতেই ঊর্ধ্বতন কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের নিয়ে কয়েক দিনের জন্য চলে গেলাম যমুনা রিসোর্টে। স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা করতে। ওই অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি লিখলেন প্রথম পাঁচ সালা কৌশলগত পরিকল্পনা। এরপর ফি বছর আমরা রিট্রিটে যেতাম ওই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারলাম তার হিসাব নিতে। আর সামনের বছরের বিভাগওয়ারি পরিকল্পনা করতাম ওই সময়। প্রয়াত জাহাঙ্গির কবির মানবসম্পদ উন্নয়নের নানা কৌশলের কথা শেখাতেন।

তবে মূল সুর বেঁধে দিতেন কাজেমী ভাই। বাস্তব জ্ঞান ও মেধার সমন্বয়ে প্রতিবারই তিনি উপহার দিতেন আমাদের আগামী দিনের চলার পথনকশা। এছাড়া মূলধারার কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের  নানা দিকে তার ব্যুত্পত্তি ও দূরদৃষ্টির কথা এই স্বল্প পরিসরে আমি বলে শেষ করতে পারব না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটি সংস্কারেই রয়েছে তার হাতের সোনালি পরশ। আমি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি এবং সাত বছর ধরে তার সঙ্গে যেসব কাজ একসঙ্গে করার সুযোগ পেয়েছি, সেসবের আলোকেই কিছু কথা লিখতে চাই।এক. জনসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা: তার ব্যাচে তিনি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। নিয়মানুযায়ী তাই প্রথম কাজ শুরু করেন জনসম্পদ বিভাগেই। নিয়োগ, পদায়ন, ট্রান্সফার, প্রমোশন, প্রশিক্ষণ, বাসস্থান, উচ্চশিক্ষা, অবসর—নানা বিষয়ে তিনি স্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। ওই ভিত্তির ওপর সামান্য এদিক-ওদিক করেই চলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এইচআরডি। সময়োপযোগী জনশক্তি উন্নয়নের জন্য দেশে ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সুযোগসহ যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, তাতে তার দারুণ সমর্থন ছিল। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এআইটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি সংগ্রহের কর্মসূচি, অনলাইনে সিএফএ তৈরির কর্মসূচি এবং মেধাবী ছেলেমেয়েদের বিদেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি লাভের সুযোগ করে দেয়ার উদ্যোগকে তিনি বরাবরই উত্সাহিত করেছেন।

বিআইবিএম, বিবিটিএ, আইবিবিসহ সব জনসম্পদ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তার পরামর্শ ও সমর্থন ছিল আসামান্য।একই সঙ্গে তিনি গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে ছিলেন। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবাসী বাঙালিদের কিছুদিনের জন্য এনে উপদেষ্টা বা প্রধান অর্থনীতিবিদ করার উদ্যোগকেও তিনি সমর্থন দিয়েছিলেন। গবেষণার অংশ হিসেবেই পলিসি অ্যানালাইসিস ইউনিট গঠন ও পরিচালনায় তার যথেষ্ট অবদান ছিল। ড. আহসান, ড. হাসান জামান, ড. ফয়সাল, গ্লেন টাসকি, ড. বিরূপাক্ষ পালসহ আরো অনেককেই তিনি গবেষণা ও নীতি সংস্কারে অবদান রাখতে উপদেশ ও উত্সাহ দিয়েছেন। আমি গবেষক বলে এ প্রক্রিয়ায় প্রায়ই আমাকেও তারা যুক্ত করতেন। আর ব্যালান্স অব পেমেন্ট নিয়ে যারা কাছ করতেন, তাদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি।দুই. বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা: জনসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ থেকে কিছুদিনের জন্য তিনি ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ বিভাগে (বিসিডি) কাজ করেন। এটিই আজকের বিআরপিডি। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় ফরেন এক্সচেঞ্জ কনট্রোল বিভাগে। এটি এখন এফইপিডি। এখান থেকেই তার বিদেশী মুদ্রা সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন, ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু। আজীবন তিনি এ বিষয়ে কাজ করেছেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে এক জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হন।

পুরনো আমলের নিয়ন্ত্রণমূলক মুদ্রা বিনিময় হারকে ধীরে ধীরে নমনীয় করার কাজে তার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই। পুরনো ‘ফেরা’ বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইনকে বদলে নতুন যুগোপযোগী আইনে পরিণত করতে তার অবদান ছিল অসামান্য। ২০১২ সালে তত্কালীন নির্বাহী পরিচালক আহসানুল্লাহ্র নেতৃত্বে গঠিত কমিটির চালিকাশক্তি ছিলেন তিনিই।

২০১৫ সালে আইনটি সংশোধিত হয়। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য অনলাইনে রিপোর্টিং, টাকাকে ধীরে ধীরে পূর্ণ বিনিময়যোগ্য করে বাজারভিত্তিক করার দিকে হাঁটা, সি-ফরম তুলে দেয়া, রিজার্ভ বৃদ্ধির পথ সুগম করা, বিনিয়োগ ধারায় পরিবর্তন আনা, বিদেশে যাওয়ার সময় ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত বিদেশী মুদ্রা নেয়ার সুযোগ করে দেয়া, বিদেশী এয়ারলাইনসের আয় দ্রুত স্থানান্তরের সুযোগ করে দেয়া, বিডার সঙ্গে সমন্বয় করে বিদেশী ঋণের পথ সুগম করা, স্বল্পকালীন ইউজেন্স বিলের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে কম সুদে বিদেশী ঋণ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা, রফতানি উন্নয়নের জন্য ইডিএফ চালু করাসহ অসংখ্য সংস্কারমূলক কাজ তার পরামর্শেই শুরু হয়েছে। এর আগেও সৈয়দ আশরাফ আলীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি ব্যাক টু ব্যাক এলসি এবং নগদ সহায়তা প্রবর্তন করে আরএমজিসহ রফতানি খাতের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শুনেছি মানি লন্ডারিং প্রিভেনশন বিষয়ে তার সার্কুলারটি ভিত্তি করেই পরবর্তী সময়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনটি চালু হয়েছে।

তা বাস্তবায়নের জন্য আলাদা ইউনিট হয়েছে।তিন. মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনা: মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মুদ্রানীতি প্রণয়নে তার বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে শেষ কথা তিনিই বলতেন। আমার মনে আছে ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও প্রধান অর্থনীতিবিদ নিয়ে গঠিত ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা টিম সভায় তুমুল বিতর্ক হতো। তিনি এ বিতর্ক শেষে যে চূড়ান্ত মতামত দিতেন, তাই আমরা গ্রহণ করতাম। এমন করেই আমরা রেপো, রিভার্? রেপো, বিশেষ রেপো, সিআরআর, এসএলআর হার নির্ধারণ করতাম। তাছাড়া প্রতিদিন কোন ব্যাংককে কত রেপো দেয়া হবে, কতটা রিজার্ভ রেপো গ্রহণ করা হবে, সে বিষয়েও তার মতামত নিয়েই বিভাগগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আফি’ গঠনের সময় তাকে ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন তৈরির কাজে যুক্ত করেছিলাম। আফি তার কাজে দারুণ সন্তষ্ট ছিল। এছাড়া তিনি জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে স্বল্পকালীন পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশে তিনি সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেছেন। রিও+২০ সহ নানা আন্তর্জাতিক ফোরামে আমি যেসব কথা বলেছি, সেসবের ‘টকিং পয়েন্ট’ তিনিই তৈরি করে দিতেন।

এ কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সুনাম, তার ভিত্তি তিনিই তৈরি করতে সাহায্য করেছেন। আরো কতভাবে যে তিনি আমাকে এবং অন্যান্য গভর্নর তথা বাংলাদেশ ব্যাংককে ঋণী করে গেছেন, তা আমি বলে শেষ করতে পারব না। মাঝে মাঝে মনে হতো বটবৃক্ষের মতো এ মানুষটির অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক চলবে কী করে? তাই বৈশ্বিক ও জাতীয় এই দুর্যোগকালে তার এভাবে চলে যাওয়ার ধাক্কা আমরা কীভাবে সামলাব, সে কথাই ভাবছি।আপাদমস্তক দেশপ্রমিক, পুরোপুরি স্বচ্ছ, সৎ, স্পষ্টভাষী, নিরহংকারী, দারুণ অন্তর্মুখী, খুবই মানবিক, তরুণদের কাছে শিক্ষকসম এবং সব বিচারেই নিপাট ভালো মানুষ  আল্লাহ মালিক কজেমীর এই হঠাৎ বিদায় মেনে নেয়া খুবই কঠিন। প্রাজ্ঞ, মেধাবী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং ও অর্থায়ন বিষয়ে চলন্ত এই ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’ অনেক দূরের অবস্থান দেখতে পেতেন। তাই তাকে একটি প্রতিষ্ঠান বললে ভুল হবে না। মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সমন্বিতভাবে তিনি সর্বদাই দেখতে চাইতেন।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us