বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর তালিকা করা হলে যে কয়েকজন ব্যক্তির নাম সবার উপরে থাকবে, তাদের মাঝে অন্যতম জামাল নজরুল ইসলাম। তাকে স্টিফেন হাকিং-এর চেয়েও বড় বিজ্ঞানী বলা হয়ে থাকে। কারণ স্টিফেন হকিং মহাবিশ্ব নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন; কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামে বই লিখে দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাতও হয়েছেন। তবে জামাল নজরুল ইসলাম মহাবিশ্বের উচ্চমার্গীয় বিষয় নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন তারও আগে। সামগ্রিক মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী বিশ্বমানের গবেষণা করেছেন। যা তার আগে কেউ করেনি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ১৯৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন জামাল নজরুল ইসলাম।
তবে তার শেকড়ের ঠিকানা চট্টগ্রামে। চাকরিসূত্রে বাবা ঝিনাইদহ অবস্থান করছিলেন বলে জন্মস্থান হয়েছে সেখানে। চার ভাই আর চার বোন নিয়ে ছিল তাদের পরিবার। বাবা মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার সাব জজ (মুন্সেফ)। মাতা রাহাত আরা বেগম ছিলেন একজন সাহিত্য অনুরাগী লেখক, গানও গাইতেন ভালো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকটি উর্দুতে অনুবাদ করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন রাহাত আরা। বংশগত দিক থেকে ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন জামাল নজরুল ইসলাম।
তৎকালে তাদের পরিবারের সঙ্গে ঢাকার নবাব বাড়ির বেশ ভালো যোগাযোগ ছিল। এমনকি জর্ডানের বাদশার পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তাদের। তাদের কলকাতার বাসায় কবি কাজী নজরুল ইসলামও যাতায়ত করতেন। কবির নামের সঙ্গে মিল রেখেই তার বাবা-মা নাম রেখেছিলেন ‘জামাল নজরুল ইসলাম’।
তবে বংশ হিসেবে অভিজাত হলেও ছিল না অভিজাত্যের অহংকার। বিস্ময়কর বালক জামাল নজরুল ইসলামকে স্কুল-কলেজে বলা হতো বিস্ময়কর বালক! তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় একটাই ভালো করেছিলেন যে শিক্ষকবৃন্দ তাকে ডাবল প্রমোশন দিয়ে এক শ্রেণীর ওপরে ভর্তি করিয়েছিলেন। এখানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে চলে যান পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে। লরেন্স কলেজ থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করে ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের শিক্ষক ফাদার সোরে জে এন ইসলামকে ডাকতেন জীবন্ত কম্পিউটার বলে। অন্যান্য বিজ্ঞানিরা যেখানে ক্যালকুলেটর আর কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতেন সেখানে জে এন ইসলাম এগুলো ছাড়াই বড় বড় হিসাব মুহূর্তের মধ্যে করে দিতেন। তিনি বলতেন কম্পিউটার আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়। তবে তিনি কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা কখনোই অস্বীকার করেননি। জে এন ইসলাম নামে পরিচিত ছিলেন বলা হয় আধুনিক বিশ্বের সাত শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর নাম নিলে জামাল নজরুল ইসলামের নাম সেখানে চলে আসবে। তিনি বিশ্বজুড়ে ‘জে এন ইসলাম’ নামে পরিচিত এবং বিজ্ঞানীদের কাছে বাংলাদেশ জে এন ইসলামের দেশ হিসেবে পরিচিত।
তিনি ক্যামব্রিজে হকিংস এর রুমমেট ও বন্ধু এবং সহকর্মী ছিলেন। প্রায় অর্ধ ডজন পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ বন্ধু জে এন ইসলামকে বলা হয় আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম মেধাবী মানুষ। কেন এমন বলা হত, তার দুটি উদাহরণ দেই। ক্যামব্রিজে ট্রিনিটি থেকে গণিতের ট্রাইপাস পাস করতে লাগে তিন বছর। জে এন ইসলাম তা দুই বছরেই শেষ করে বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। ২০০১ সালে পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সে সময় জামাল নজরুল ইসলাম গাণিতিক হিসাব কষে পৃথিবীর মানুষকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন সেরকম কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ প্রকৃতির নিয়মে সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ একই সরলরেখা বরাবর চলে এলেও তার প্রভাবে পৃথিবী নামক গ্রহের কোনো ক্ষতি হবে না।
একাধারে পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ জে এন ইসলাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে হকিংস বলেছিলেন, তিনি আমার রুমমেট, বন্ধু এবং আমরা ছিলাম পরস্পর পরস্পরের শিক্ষক। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত হকিংস যেসব বিজ্ঞানীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন তার মধ্যে জে এন ইসলাম ছিলেন অন্যতম। যেমন বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রথম রেডিও আবিষ্কার করলেও কৃতিত্ব চলে গিয়েছিল মারকনির কাছে। ঠিক তেমনি ঘটেছে জে এন ইসলামের ক্ষেত্রেও। স্টিফেন হকিংস যদি বিশ্ব বিখ্যাত পদার্থবিদ হন, তাহলে জে এন ইসলাম ছিলেন ব্রহ্মাণ্ড খ্যাত। জামাল নজরুল ইসলামের বই জামাল নজরুল ইসলাম বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন ৬টি।
তবে বই, গবেষণা ও সম্পাদনার বিস্তারিত তালিকা করলে তা অনেক দীর্ঘ হবে। এদের মাঝে ৩টি বই বিশ্ববিখ্যাত। ক্যামব্রিজ ও হার্ভার্ডসহ বেশ কয়েকটি নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়। তার লেখা বই ‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ ফরাসি, জাপানী, পর্তুগিজ, ইতালিয়ানসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ই তার প্রথম বই, যা ১৯৮৩ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। শিক্ষা ও মননশীল প্রকাশনা জগতে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস অনেক বিখ্যাত। মানের দিক থেকে উন্নত বলে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও বিশ্ববিদিত। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত এই বইটি তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয়।
বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত জামাল নজরুল ইসলামের লেখা কৃষ্ণ গহ্বর গ্রন্থটি হকিংস এর ব্ল্যাক হোলে থিওরির অনেক আগেই প্রাচ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পঠিত হতো। কিন্তু আমরা কেউ তা জানি না, খবর রাখি না। জানলেও তা কেউ প্রচার করেনি কখনো। ক্যামব্রিজের শিক্ষক প্রফেসর সুসানার ভাষায়, বিজ্ঞানময়তা বিবেচনায় হকিং এর ‘অ্যা ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম’ এর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হচ্ছে জে এন ইসলামের ‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’।
বলা হয় ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইমে এক কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। বিজ্ঞান গুরুত্বের যদি এটি হয়ে থাকে তাহলে জে এন ইসলামের বইটি একশ কোটি বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু হয়নি! দেশে প্রত্যাবর্তন জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমী। নিজের আয়ের থেকে অর্থ জমিয়ে দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশের পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধে উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন।
সর্বোপরি বিদেশে সহস্র পাউন্ডের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে জামাল নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের চলে এসেছিলেন। জামাল নজরুল ইসলামের দেশে প্রত্যাবর্তন এতটা সহজ ছিল না। তাকেও নিজের দেশের মাটিতে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১৯৮১ সালের দিকে দেশে ফিরে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তার বেতন ছিল আটাশ শ’ টাকা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কিছুতেই রাজি হয়নি তাকে তিন হাজার টাকা বেতন দিতে। এই বেতনেই তিনি অধ্যাপনা করে যান। বছরখানেক অধ্যাপনা করার পর গবেষণার কাজে এবং পারিবারিক প্রয়োজনে আবার লন্ডনে ফিরে যাবার প্রয়োজন দেখা দেয় তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার জন্য বাইরে গেলে কর্তৃপক্ষ ছুটি প্রদান করে এবং ফিরে আসা পর্যন্ত চাকরি বলবৎ থাকে। এর জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিচ্ছিল না। উপায় না দেখে চাকরি ছেড়ে চলে যান তিনি।