ত্রিশঙ্কু অবস্থা ভারতের। একদিকে চীন, অপরদিকে পাকিস্তান। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবার নেপালের ঔদ্ধত্য। সীমান্ত নিয়ে বেহাল এখন করোনায় বিপর্যস্ত ভারত। কোনটা রাখবে আর কোনটা ধরবে বুঝতে পারছে না বিজেপি সরকারের কর্ণধাররা।বৃ
হস্পতিবার নেপালের উচ্চকক্ষে পাশ হয়ে গেছে নতুন মানচিত্র বিল। ভারতের তিনটি ভূখণ্ড উত্তরাখণ্ডের লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখকে নিজেদের দাবি করে নতুন মানচিত্র তৈরি করেছে নেপালের কমিউনিস্ট সরকার। শুধু তাই নয়, ভারত বিরোধী সুর যে নেপাল ভালোভাবেই চড়াচ্ছে, তা বারবার প্রমাণ দিচ্ছে তারা। এখন নেপালের রেডিওতে দিনভর বাজানো হচ্ছে ভারতবিরোধী গান। ঠিক যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে রেডিওতে লাগাতার প্রচার চালায় কিমের উত্তর কোরিয়া, নেপালও ভারতের ক্ষেত্রে সে পথই অবলম্বন করেছে।
ভারতীয় প্রশাসনের দাবি, কথা বলে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায়নি কাঠমান্ডু। ভারতের এলাকা তাদের বলে দাবি করার এই সিদ্ধান্ত অদূরদর্শী এবং আত্মকেন্দ্রিক। যে দ্রুততায় নেপালের উভয়কক্ষে বিলটি পাশ করানো হয়েছে, তার নিন্দা করে ভারতের বক্তব্য, সীমান্ত বদলের ক্ষেত্রে কোনও ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ নেপালের কাছে নেই। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট বক্তব্য, 'এ ভাবে জোর করে ভূখণ্ড বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়, এটি আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত-সমস্যা মেটানোর চুক্তির পরিপন্থী।'
১৮১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এবং তৎকালীন নেপালের রাজার মধ্যে হওয়া 'সুগৌলি চুক্তি' অনুযায়ী কালী নদীর পশ্চিমপাড়ের সব ভূখণ্ডের স্বত্ব ত্যাগ করে নেপাল। এরপর কালী নদীর গতিপথ অনুসরণ করেই ভারত ও নেপালের সীমান্ত নির্ধারিত হয়। ১৮১৭ সালে তিনকর, ছাংড়ু, নভি এবং কুঠি গ্রামকে তাদের এলাকা বলে দাবি জানাতে থাকে নেপাল। তিনকর এবং ছাংড়ু কালী নদীর পূর্বদিকে বলে তা নেপালকে দিয়ে দেন ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল। কিন্তু বাকি দু'টি কালী নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বলে স্বত্বাধিকার ছাড়েনি ভারত। কালী নদীর উৎস সংক্রান্ত বিবাদও তখনই মিটিয়ে নেওয়া হয়।কিন্তু নেপাল দাবি করতে থাকে, কুঠি ইয়াংক্তি এবং লিপুগড় নদীর গতিপথ অনুযায়ী ওই দু'টি গ্রামও তাদেরই।
১৯৯৭, ১৯৯৮ এবং ২০১৪ সালে সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় বসে দু'দেশ। গত ৮ মে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং যখন কৈলাস মানসরোবর যাওয়ার জন্য লিপুলেখ দিয়ে নতুন রাস্তার সূচনা করেন, সমস্যা ঘোরালো হতে থাকে তখন থেকেই । লিপুলেখ তাদের এলাকা বলে সরব হয় নেপাল। ভারত আলোচনার প্রস্তাব দিলেও নেপাল আগ্রহ দেখায়নি। বদলে তারা মানচিত্র বদলে দেয়।আর এতেই বেজায় সমস্যায় পড়েছেন উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের ধরচুলা, ঝুলাঘাটের মতো এলাকার বাসিন্দারা।