বাবা হারানোর ২০ বছর

এনটিভি প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২০, ২০:৫০

২০০০ সালের কথা। সে সময় সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়া। বাবা আবু বকরের আকস্মিক মৃত্যু ছোট্ট কর্ণিয়ার হৃদয়কে দুমড়েমুচড়ে দেয়। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে স্বামীহারা হন মা সেলিনা আক্তার। সেই শৈশব ছাড়া বাবার আদর আর পাওয়া হয়নি কর্ণিয়ার। প্রতিটি মুহূর্তে বাবার কথা মনে পড়ে।

মনে পড়ে শৈশবে বাবার সঙ্গে কাটানো দারুণ সব মুহূর্ত। আর বুকের এক কোণে ব্যথা অনুভব করেন। তবে বাবার আদর দিয়েও যেন মেয়েকে মানুষ করেছেন সেলিনা আক্তার। মায়ের যত্নে লালিত সেই কন্যাই আজকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কর্ণিয়া। অল্প বয়সে বাবাকে হারান বলে খুব বেশি মুহূর্ত স্মরণে নেই কর্ণিয়ার। তবে শৈশবে বাবার সঙ্গে খুব সখ্য ছিল।

রাজধানী ঢাকায় বেড়ে ওঠা হলেও কর্ণিয়ার জন্ম নানাবাড়ি মাগুরায়, যদিও তাঁর পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহ। গ্রামে কর্ণিয়ার বাবা ছিলেন সবচেয়ে সুবোধ-শান্ত মানুষের একজন। কোনো সাতপাঁচে নেই, বিবাদে নেই। কোথাও ঝগড়া দেখলে ঘরে ঢোকা মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কর্ণিয়ার ভাষায় ‘মাটির মানুষ ছিলেন বাবা’। ২০০০ সালের ২৬ নভেম্বর মারা যান তিনি। এরপর বহু বছর কেটে গেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর কর্ণিয়া দেখেছেন মায়ের কষ্ট। অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। তবু তাঁর মা হাল ছাড়েননি। মেয়েকে সুযোগ্য করে তুলতে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ছিল তাঁর। মায়ের স্বপ্ন বৃথা যায়নি।

কর্ণিয়ার কণ্ঠের জাদু এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। পপ, রক, ধ্রুপদি সংগীতসহ প্রায় সব ধরনের গানেই স্বাচ্ছন্দ্য কর্ণিয়ার। হালে রবীন্দ্রসংগীতও গাইছেন। নিয়মিত স্টেজে পারফর্ম করছেন। ২০১২ সালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের গানভিত্তিক শো ‘পাওয়ার ভয়েস’-এ অংশগ্রহণ করে রানার্সআপ হন। সেই থেকে প্রচারের আলোয় তিনি। অনেক মিক্স অ্যালবামে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গান। বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও গেয়েছেন। আজ ২১ জুন, বিশ্ব বাবা দিবস।

বিশেষ এ দিনে বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছেন সন্তানরা। কর্ণিয়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবার প্রতি ভালোবাসা জানিয়েছেন। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। বিশেষ দিবস বলে নয়, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে মা-বাবাকে স্মরণ করেন কর্ণিয়া। বিশেষ দিনে যখন সবাই সোশ্যাল মাধ্যমে বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, সেসব দেখে ভালো লাগে কর্ণিয়ার। আবার বুকের কোণে হাহাকারও জমে ওঠে। তখন শৈশবে বাবার সঙ্গে তোলা হাতেগোনা কয়েকটি ছবির ওপর চোখ বুলান। অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

এনটিভি অনলাইনকে কর্ণিয়া বলেন, ‘বাবা জীবনে আমার গায়ে হাত তোলেননি। বাবার সঙ্গে আমি ফ্রি ছিলাম। মাকে ভয় পেতাম যমের মতো। সকাল ৮টায় স্কুলে যেতে ইচ্ছে করত না। আমার ঘুম ভাঙানোর জন্য বাবা শীতে জোরে ফ্যান চালিয়ে দিতেন। গরমে ফ্যান বন্ধ করে দিতেন। কখনো চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিতেন। তারপর উঠেই স্কুলে দৌড় দিতাম। বাবার ঘাড়ে উঠে বসে তাঁর চুলে ঝুঁটি বেঁধে দিতাম। বাবা সব সময় শান্ত-স্নিগ্ধ ছিলেন। কিছু বলতেন না। হাসতেন। এসব স্মৃতি সব সময় মনে পড়ে।’

সোশ্যাল যোগাযোগ মাধ্যমে যখন সবার বাবাকে দেখেন, তাঁদের নিয়ে ভালো-ভালো পোস্ট দেখেন, তখন কিছুটা মন খারাপ হয় কর্ণিয়ার। কষ্টের কথা তো আর ওইভাবে বলা যায় না। যখন মা অসুস্থ হন, যখন কোনো সংকটে পড়েন, তখন বেশি বেশি যেন ভেসে ওঠে বাবার মুখ। কর্ণিয়ার মনে হয়, বাবা থাকলে বুঝি এত কষ্ট করতে হতো না, বাবাই সব হ্যান্ডেল করতেন! বাবা মারা যাওয়ার পর মাকেই সব সামলাতে হয়েছে। তখন কর্ণিয়ার মায়ের বয়সই বা কত। মোটে কুড়ি। তাঁর দুই মেয়ে।

দাদাবাড়ি থেকে তেমন সহায়তা পাননি, নানাবাড়ি থেকেও না। মা অনেক কষ্টে দুজনকে মানুষ করেছেন। ঢাকায় আসার পর ছোট্ট একটা রুমে থাকতেন। দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়েছে কর্ণিয়ার মাকে। তবে দুই মেয়েকে মানুষ করেছেন। কর্ণিয়া এখন কণ্ঠশিল্পী আর ছোট বোন ডেন্টিস্ট। কষ্টের স্মৃতি কিছুটা ভাগাভাগি করলেন কর্ণিয়া। বললেন, ‘আমি যখন ক্লাস নাইনে উঠি, কমার্সে পড়ি। কোচিংয়ে পড়ার মতো টাকা ছিল না। প্রথম সেমিস্টারে ফেল করলাম। তখন মনে হতো, বাবা বেঁচে থাকলে এমনটা হতো না।

দ্বিতীয় সেমিস্টারে অনেক কষ্ট করে কোচিংয়ে ভর্তি করালেন মা। পরে সর্বোচ্চ নম্বর পেলাম। এসব স্মৃতি আজও তরতাজা।’ কর্ণিয়া উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন রাজধানীর ফার্মগেটের আইডিয়াল কমার্স কলেজে। সে সময় কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবদুল হালিম পাটোয়ারী কর্ণিয়াকে অনেক সহায়তা করেছেন। কর্ণিয়ার মা যখন স্যারের কাছে অর্থ-সংকটের কথা জানান, হালিম স্যার বিবেচনা করেন। আজও তিনি নানাভাবে কর্ণিয়ার পাশে রয়েছেন। কর্ণিয়া বলেন, ‘উনি বাবার মতো দেখভাল করেছেন। আমার জীবনে উনার অবদান অনেক।

সংগীতশিল্পী হিসেবে আমার এই যে পরিচিতি, তাতে উনি গর্ব করেন। উনার শিক্ষার্থীদের বলেন। সত্যি বলছি, আমি যেখানে থাকছি, ফ্ল্যাট কিনেছি, তাতেও উনার অবদান রয়েছে। স্যার এখন বৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁর জন্য সব সময় দোয়া করি।’ বাবা দিবসে এই যে অসংখ্য মানুষ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, ভালোবাসার কথা বলছেন, তাতে অবশ্য আপত্তি নেই কর্ণিয়ার। তবে একটা কিন্তু আছে। তাঁর জীবন অভিজ্ঞতা বলছে, ‘বাবা যখন বেঁচে থাকেন, তখন অনেকে মূল্যায়ন করে না।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us