বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে আমার ভাইভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাইভা হিসেবে প্রথম থেকেই মনে অনেক ভয় কাজ করছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস, পরিচালনা পর্ষদ—সব কিছু সম্পর্কে খুব ভালো প্রিপারেশন নিয়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, ব্যাংকিং সম্পর্কে আমাকে একটি প্রশ্নও করা হয়নি। আমার পড়ার বিষয় প্রাণিবিদ্যা থেকেই সব প্রশ্ন এসেছিল। নিজের পড়ার বিষয়ে কনফিডেন্ট ছিলাম, যা-ই ধরুক, পারব। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বেশির ভাগ প্রশ্নেরই কোনো ভালো উত্তর দিতে পারিনি। আমার নিজের ধারণা মতে, এটা আমার সবচেয়ে বাজে ভাইভা ছিল। যে বোর্ডে ভাইভা দিয়েছিলাম, তার চেয়ারম্যান ছিলেন ইকোনমিক অ্যাডভাইজার আকতারুজ্জামান স্যার। বোর্ডে সদস্য ছিলেন পাঁচজন।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা, নার্ভাস লাগার কিছু নাই। আপনার আগে অ্যাগ্রিকালচারের একজনকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। সে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। আশা করছি, প্রশ্নটার জবাব আপনার কাছ থেকে পাব।
চেয়ারম্যান : তো মহুয়া, বলেন তো—একটা ইঁদুর প্রতিবছর আমাদের ন্যাশনাল বাজেটের ঠিক কত শতাংশ ক্ষতি করে?
আমি : (প্রশ্ন শুনে কয়েক সেকেন্ড কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলার চেষ্টা করলাম) আসলে স্যার, ন্যাশনাল বাজেটের সাইজ অথবা ইঁদুরের ক্ষতির পরিমাণ—কোনোটাই তো প্রতিবছর একই রকম থাকে না। এ রকম কোনো স্ট্যাটিক ডাটা তো আসলে...
চেয়ারম্যান : শোনেন, পণ্ডিতি করবেন না। একটা প্রশ্ন করেছি, জানা থাকলে বলেন, না হয় চুপ থাকেন।
আমি : (ঝাড়ি খেয়ে টের পেলাম, হাত-পা ছেড়ে দিচ্ছে! মনে মনে ভাবলাম, চাকরি পাওয়ার আশা আমার শেষ। তা-ও সাহস করে বললাম) দুঃখিত স্যার, আসলে এ রকম কোনো স্ট্যাটিক ডাটা আমার জানা নাই।
চেয়ারম্যান : কী পড়াশোনা করছেন? এত এত ভালো রেজাল্ট করে আসছেন, অথচ যা জানতে চাইলাম তা-ই বলতে পারলেন না। আপনার অনার্সের সিজিপিএ ৩.৭৯ এবং মাস্টার্সের সিজিপিএ ৪.০০। অথচ আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারলেন না! কী পড়লেন?
আমি : (কেমন যেন খুব ঘাবড়ে গেলাম, তা-ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম) জি স্যার। আমি জুওলজিতে অনেক কিছুই পড়েছি, তবে এ রকম কোনো কিছু আমার জানা নাই। দুঃখিত স্যার।
চেয়ারম্যান : কোনো এক প্রফেসর তাঁর রিসার্চের জন্য ফান্ড চেয়ে রিসার্চ প্রপোজাল পাঠিয়েছেন, সেখানে সেই স্যার দেখিয়েছেন যে ইঁদুর বছরে ১০ শতাংশের মতো ক্ষতি করে।
(সদস্য ২ একজন ম্যাডাম। কিছু একটার কয়টা ফেইজ, এটা জিজ্ঞেস করলেন। নার্ভাসনেসের কারণে ম্যাডামের প্রশ্ন বুঝলাম না)
আমি : স্যরি ম্যাম, বুঝতে পারছি না।
(ম্যাম প্রশ্নটা রিপিট করলেন। আমি এবারও বুঝলাম না)
আমি : দুঃখিত ম্যাম, পারছি না।
সদস্য ২ : আচ্ছা মহুয়া, তাহলে বলুন, একটা কুকুরের জীবনের এক বছর সমান মানুষের জীবনের কত বছর?
আমি : (এইবার আমার তবদা খাওয়ার মতো অবস্থা। তা-ও মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভেবে উত্তর দিতে শুরু করলাম) ম্যাডাম, একটা কুকুরকে যদি আমরা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে বেঁচে থাকতে দিই, তাহলে সাধারণত সে ১৩-১৪ বছরের মতো বাঁচে। তো, কুকুরের গড় আয়ু যদি ১৩ বছর ধরি আর আমাদের মানুষদের গড় আয়ু যদি ৭১ বছর ধরি, তাহলে কুকুরের জীবনের ১ বছর সমান হবে আমাদের ৭১/১৩, অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ বছরের মতো।