দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে বিজেপি নেতাদের রেহাই, অভিযুক্ত মুসলিম বিক্ষোভকারীরাই
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২০, ২১:০২
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনায় পুলিশ যে সবশেষ চার্জশিট পেশ করেছে তাতে 'হেইট স্পিচ' দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের নাম উল্লেখই করা হয়নি।
বরং দিল্লি পুলিশের অভিযোগপত্রে ওই দাঙ্গার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয়েছে সেই সব প্রতিবাদকারীদের, যারা শহরের নানা প্রান্তে তখন দেশের নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
ওই দাঙ্গার ঘটনায় যেসব এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বা গ্রেপ্তার হয়েছে – তা থেকে পরিষ্কার, ওই বিক্ষোভে জড়িত মুসলিম নেতা বা ছাত্রছাত্রীদেরই এখন দোষী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দিল্লির উত্তর-পূর্ব প্রান্তে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় অন্তত ৫৩জন নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম।
তার ঠিক আগে শহরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ চলছিল – এবং পাশাপাশি বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরাও প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নানা উসকানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
দিল্লি বিজেপির বিতর্কিত নেতা কপিল মিশ্রা ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের মৌজপুর চকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই হুমকি দিয়েছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে থাকা অবধি তারা চুপ থাকবেন – কিন্তু তারপরও বিক্ষোভকারীরা রাস্তা খালি না-করে দিলে তারা জোর করে তাদের তুলে দেবেন, পুলিশের কথাও শুনবেন না।
এর কিছুদিন আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এই প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্য করেই জনসভা থেকে স্লোগান দেন "দেশের সঙ্গে যারা বেইমানি করছে তাদের গুলি করে মারা হবে।"
কিন্তু দিল্লি পুলিশের চার্জশিটে দাঙ্গা কীভাবে হল, তা নিয়ে যে দীর্ঘ ঘটনাপরম্পরা বর্ণনা করা হয়েছে তাতে এসব বক্তৃতার কোনও উল্লেখই নেই।
'তদন্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে'
দিল্লির দাঙ্গাপীড়িতদের হয়ে অনেকগুলো মামলা লড়ছেন মানবাধিকার আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস।
তিনি বলছিলেন, "দাঙ্গার সময় পুলিশের বিরুদ্ধেই মারধর, অগ্নিসংযোগ বা ভয় দেখানোর অন্তত আশি-নব্বইটা অভিযোগ এসেছে, কিন্তু পুলিশ একটারও এফআইআর নিতে রাজি হয়নি।"
"আর ভিক্টিমদের বয়ানের ভিত্তিতে নয়, পুলিশ তদন্তটা সাজিয়েছে তাদের বানানো গল্প আর সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। অথচ আমরা সবাই জানি দাঙ্গার মূলে ছিল বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের ঘৃণা ছড়ানো ভাষণ!"
সাংবাদিক-অ্যাক্টিভিস্ট সারা নাকভিও বিবিসিকে বলছিলেন, "বেশির ভাগ টিভি চ্যানেলের ন্যারেটিভে যেভাবে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের দেশদ্রোহী সাজানো হয়েছে – দিল্লি পুলিশও ঠিক সেই লাইনেই তদন্ত করেছে।"