ইসলামের দৃষ্টিতে রুকইয়া: তাবিজ-তুমারের চেয়েও বড় শক্তি দোয়া
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২০, ২০:৫৫
তাবিজ তুমার কখনো সমস্যা সমাধানের মাধ্যম নয়। যদি কেউ সরাসরি আল্লাহর কাছে চায় এবং দু’রাকাত সালাতুল হাযত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে যে, হে আল্লাহ! আপনি দয়া করে আমার উদ্দেশ্য পুরা করুন, হে আল্লাহ! আমার সমস্যার সমাধান করে দিন, হে আল্লাহ! আমার এ পেরেশানি দূর করুন, এরূপ দোয়াতে শুধু সওয়াবই সওয়াব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত হলো, যখন কোনো হাযত দেখা দেয়, আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া কর। যদি দু’রাকাত সালাতুল হাযত পড়ে দোয়া করা যায় তাহলে সেটা আরো উত্তম। এতে উদ্দিষ্ট বিষয় তার জন্য উপকারী হলে, ইনশাআল্লাহ সেটা হাসিল হবে। সওয়াব তো সর্বাবস্থায়ই পাওয়া যাবে। তাই উদ্দেশ্য দুনিয়াবি হলেও দোয়া করা উচিত। এতে অবশ্যই সওয়াব পাওয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া সম্পর্কে বলেন,
الدعا هو العبادة দোয়া একটি ইবাদত। (তিরমিজি শরিফ)।
তাবিজ-তুমারকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা:
তাই কেউ যদি ঝাড়-ফুঁক করতে না জানে এবং সারাজীবনেও তাবিজ লিখতে না পারে কিন্তু বিভিন্ন সমস্যায় সে সরাসরি আল্লাহর কাছে দোয়া করে, নিঃসন্দেহে তার এ কাজ ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজের চেয়ে বহুগুণে ভালো ও উত্তম। তাই সবসময় তাবিজ-কবজের পেছনে লেগে থাকা ভালো নয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে যে বিষয়টি যেভাবে বর্ণিত আছে, সেটিকে সেভাবেই করা উচিত। যদি কখনও প্রয়োজন দেখা দেয়, আল্লাহর নাম নিয়ে ঝাড়-ফুঁক করাতে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু সর্বদা তার পেছনে লেগে থাকা এবং এটাকে একপ্রকার পেশা বানিয়ে নেয়া কোনোভাবেই সঠিক নয়।
আত্মিক চিকিৎসা কি?
আজকালকার লোকেরা ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ, অজিফা-আমল, কোরআনখানি এবং খতমের নাম দিয়েছে রুহানী এলাজ বা আত্মিক চিকিৎসা। কিন্তু এ নামটি বড়ই বিভ্রান্তিকর। কারণ মানুষের চারিত্রিক এবং বাহ্যিক ও আত্মিক আমলের সংশোধনকে বলা হয় রুহানী এলাজ। যেমন, কারো মাঝে অহংকার বা হিংসা আছে কিংবা কারো প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়েছে, এটা কীভাবে দূর হবে, এর জন্য বুজুর্গদের বাতানো চিকিৎসাকে বলা হয় রুহানী এলাজ। অথচ লোকেরা ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজের নাম দিয়েছে রুহানী এলাজ। এটি সঠিক নয়।
শুধু তাবিজ দিয়েই পীর বনে যাওয়া:
কারো তাবিজ-কবজে বা ঝাড়-ফুঁকে যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো হয়, এটি তাবিজদাতার মুত্তাকি বা পরহেজগার হওয়ার দলিল নয় এবং তাবিজদাতা বড় আলেম, এটি এ কথাও বুঝায় না। বরং বিষয়টি হলো, আল্লাহ তায়ালা তাঁর কালামের মাঝে তাসির রেখেছেন, যে ব্যক্তি তা পাঠ করবে কিংবা তা ধারণ করবে সে তাসির লাভ করবে। কথাটি এ জন্যই বললাম, কারণ অনেক সময় দেখা যায় কারো তাবিজ-কবজে কাজ হচ্ছে দেখে লোকেরা তাকে পীর বানিয়ে নেয়; তার জীবনযাপন শরীয়তের পরিপন্থী এবং সুন্নতের খেলাফ হলেও এর ফলে তার অনুসারীরাও শরীয়তের পরিপন্থী কাজে জড়িয়ে যায়।