হানিফ মোহাম্মদ একটা দু:খ নিয়ে মারা গেছেন। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে এক ইনিংসে ৫০০ রান করতে না পারার দু:খ। এই দু:খটাতে তাঁর ছিল একক অধিকার। এখনো তা-ই আছে। আর কোনো ব্যাটসম্যান যে ৪৯৯ রানে রান আউট হননি!
৫০০তম রানটি নিতে গিয়ে যে রান আউট হয়েছেন, সেটি অবশ্য জেনেছেন একটু পরে। আউট হয়ে ফেরার সময় হানিফ জানতেন, তিনি করেছেন ৪৯৭। মাঠ থেকে বেরোনোর সময় স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে রীতিমতো চমকে যান। কারণ সেটিতে তাঁর রান দেখাচ্ছে ৪৯৯। যা ভেবেছিলেন, তার চেয়ে ২ রান বেশি করলে এমনিতে ব্যাটসম্যানের খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে তো ঘটনা অন্যরকম, হানিফের দু:খ তাতে আরও বেড়ে যায়।
২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় করাচির ইউনিভার্সিটি রোডে হানিফ মোহাম্মদের ছিমছাম বাংলোমতো বাড়িতে বসে সেই দু:খের কথা শুনেছিলাম তাঁর নিজের মুখেই। এত বড় অর্জনের এত কাছে এসে রান আউট হয়ে যাওয়াটাই বাকি জীবন অনেক বড় একটা দু:খ হয়ে থাকার জন্য যথেষ্ট। হানিফের দু:খটা আরও বেশি ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়েছিলেন বলে। দিনের খেলার দুই বল বাকি থাকতে স্কোরবোর্ডে নিজের রান দেখেছিলেন ৪৯৬। পঞ্চম বলটিকে ডিপ একস্ট্রা কাভারে পাঠিয়ে সেখানে মিস ফিল্ডিং হওয়ায় স্ট্রাইক ধরে রাখতে দ্বিতীয় রান নিতে তাই প্রাণপণে দৌড় লাগান। ক্রিজে পৌঁছুতে পারেননি। তার মানে তো তিনি ৪৯৭ রানেই আউট। সেটি তাহলে ৪৯৯ হলো কীভাবে? নাম না জানা যে কিশোর কায়েদ-ই-আজম ট্রফির সেই করাচি বনাম ভাওয়ালপুর সেমিফাইনালের ম্যাচে স্কোরবোর্ডের দায়িত্বে ছিল, এই দায় আসলে তার। ঠিক অংকের বোর্ডটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে ৪৯৬-কে ৪৯৮ বানাতে সে দেরি করে ফেলে। ছোট্ট ওই ভুলটাই হয়ে যায় হানিফের আমৃত্যু দু;খের কারণ। প্রায় ৪৩ বছর পরও যেটি বলার সময় দু:খ ঝরে পড়ছিল তাঁর কণ্ঠে, 'তখন আমি এত সেট ছিলাম যে, রান ৪৯৮ জানলে পঞ্চম বলটিতে ঝুঁকি না নিয়ে ২ রান নেওয়ার জন্য শেষ বলটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম।'