জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২০, ০১:৪৬
বল বীর- বল উন্নত মম শির!শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর! বল বীর-বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি' চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি' ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া, খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর! তিনি চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রুপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কয় জন আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সম্পর্কে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পড়তে পারেন? সম্পর্কিত খবর কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যাউইমেন পিস ক্যাফের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনর্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ স্থগিত তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সোমবার ১১ জ্যৈষ্ঠ তার ১২১তম জন্মবার্ষিকী।
বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও এ বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছেনা। তবে এ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শীর্ষক আনুমানিক ৫০ মিনিটের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান সোমবার (২৫ মে) সকাল ১১টা বা নিকটতম সময়ে বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচারিত হবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় জানিয়েছে। সোমবার পবিত্র ঈদ উল ফিতরের এ আনন্দময় দিনে সবাইকে ঘরে বসে এ অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে। বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মত। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভুত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙ্গিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে। নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন যার প্রভাব তার লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তার সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১২ই ভাদ্র ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নজরুল। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি।