You have reached your daily news limit

Please log in to continue


বর্ধমানে আবার ফিরুক ছায়াতরু

বাড়ির সামনের আমের গুটিগুলো যখন আচমকা পুষ্ট হয়ে উঠত, চাঁপাগাছের ফুলগুলো সকালের বাতাসে মিশিয়ে দিত তাদের সুগন্ধ। মুক্তোর মতো সাদা জুঁই ফুলের পারফিউম জানান দিত গরমকাল এসে গেছে। তখন মফস্বলে গ্রীষ্মের শুরুতে অধিকাংশ স্কুলই হতো সকালে। স্কুল থেকে ফিরেই চলে যেতাম বাঁকা নদীতে। বাঁকার টলটলে জলে চলত দাপাদাপি ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না বাড়ির লোক এসে তুলে নিয়ে যেত। গরমকালে ছাদের ওপর আকাশ দেখা আর হাওয়ার মধ্যেই আমাদের মফস্বল চিনত লোডশেডিংকে। লোডশেডিং মানেই পড়ার ছুটি, আবার কখনো হারিকেনের আলোয় দেয়ালজুড়ে গুহাচিত্র। হাতের কারসাজিতে দৌড়ে যাওয়া হরিণ, রাত বাড়ত, পাল্লা দিয়ে বাড়ত আশপাশের বাড়ির কোলাহল। সবাই ছাদে অথবা উঠোনে। হাতপাখার হাওয়া যতটুকু দিয়ে যাচ্ছে তখন একটু শান্তি আবার ফিরে আসার মধ্যে কী গুমোট। এমনই অনেকগুলো পেরিয়ে যাওয়া গ্রীষ্মের অভিজ্ঞতা বাংলার ঋতু নিয়ে লিখতে বললেই কেবল শুরুতেই উফফ...ছাড়া মাথায় আর কিছু আসতেই দিত না। পরে একবার মনে হয়েছিল কেমন যেন উদাসী তাপসের মতো এই গ্রীষ্ম। যার অনন্ত অপেক্ষার দুপুর, ঘুঘুর ডাকে মিশে থাকা ক্লান্তি। আর একদম ছোটবেলায় আমাদের প্রাইমারি স্কুলের বেঞ্চে ঘামতে ঘামতে কখন কারেন্ট আসবে বলে চিৎকার করতে থাকার সময় মাস্টারমশাই একটা কথা বলেছিলেন। ‘এত গরম গরম করে তোরা চেঁচিয়ে মরলি, আর রবিঠাকুর এই বোশেখ মাসেই এলেন’। তারপর থেকে গরমকালের কষ্ট, ভিড় রাস্তায় ঘামতে থাকলেও খুব কষ্টের মধ্যেও সেই কথাটা মনে পড়ে কেমন সব উবে যায়...। মস্ত ফ্ল্যাটগুলো যখন আকাশ ঢেকে দেয়নি, ডালপালা নিয়ে গাছগুলো যখন পাড়াজুড়ে থাকত, গাছের নিচে চলত অনেক রকম খেলা। পাড়াজুড়ে হইচই। ছেলেদের ডাঙ্গুলি-মার্বেল, মেয়েদের চু-কিত–কিত। এভাবেই কেটে গিয়েছিল স্কুলবেলাটা আম, জাম, কাঁঠাল আর কৃষ্ণচূড়া সকাশেই। আর এ শহরের যে প্রান্তে তখন শাল, সেগুন, বকুল, মেহগনি আর নাগচম্পার আবগারি আয়োজন, তদ্দূর অব্দি যাওয়ার অনুমতি বন্ধুর বাড়ি যাব এমন অজুহাতেও ডাহা ফেল করে যেত বাড়ির শাসনে। তারপর প্রথম যেদিন কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পা দিলাম, টের পেলাম সিংহাসনজুড়ে এক রাজকীয় উপস্থিতি। গোলাপবাগ-তারাবাগ তো বটেই, আবহটা শুরু হয়ে যেত তারও অনেক আগে ছাত্রাবাসের পাঁচিলগুলোকে বিপ্লবীয়ানায় তুচ্ছ করে দেওয়া কৃষ্ণচূড়ার সমাহারে। গোলাপবাগেই উপলব্ধি করেছিলাম গ্রীষ্মের আসল গন্ধ বেলফুল, চাঁপাফুল, আর বকুল ফুলের গান্ধর্ব-মাধুকরী। গোলাপবাগের চারপাশের রাস্তাটার রং এপ্রিল-মেজুড়ে থাকত কৃষ্ণচূড়ার ছিন্ন রঙে রাঙা। হিউম্যানিটিজের ডান পাশে এক বৃদ্ধ মেহগনির নিচে রাজুর চায়ের ঠেক। কোনো এক উতল হাওয়ায় ছিন্ন হওয়া সেই গাছেরই কাণ্ডে আড্ডায় দুপুর গড়িয়ে সন্ধে নামত। লহরের কাছাকাছি একান্তে সময় কাটানো যুগলেরা উঠে পড়ত বাড়ি ফেরার তাগিদে। তখনো গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিল লাল মোরামের রাস্তা। সাইকেল বা মোটরবাইক চালিয়ে গেলে গোধূলির মতো মিহি ধুলো পিছু নিত। বর্ষায় লাল মোরামের রাস্তায় হাঁটলে লেপটে যেত লালচে ববি-প্রিন্ট। পাকা পাকা পড়ুয়ারা বলত এটা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সিগনেচার প্রিন্ট। এখন গোলাপবাগে পিচের কালো রাস্তা। রাস্তার দুপাশে কোথাও মোরামের মায়া রয়ে গেছে। দেশ–বিদেশ থেকে মূল্যবান ও বিরল প্রজাতির নানা গাছগাছড়া এনে গোলাপবাগে লাগিয়েছিল বর্ধমান রাজপরিবার। ভেষজ-উদ্যানও ছিল গোলাপবাগে। ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখে জলের ধারে একটা বিরল প্রজাতির ‘সেঞ্চুরিয়ান পাম’গাছ ছিল৷ গাছটি এক শতাব্দীতে একবার ফুল দিয়েই মারা যায়। ভেষজবিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগে এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে সেঞ্চুরিয়ান পামের কদর আছে। এসবই জন্মান্তরের কথা বলে মনে হয় এখন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাড় বাঁধানো পুকুরের জলের কাছাকাছি অশোকগাছেরা আর গল্প করে না। অথবা করলেও তাদের নিবিড় দুঃখে পৌঁছানো যায় না হয়তো। ‘দিলখুশা প্রাসাদ’–এর পাশে তাকালে তখন কীরম একটা ভয় করত, অন্ধকার সবুজের ঘন হয়ে আসা ভয়। এখন সেখানে কম্পোজিট বিল্ডিং, লোকজনের যাতায়াতে ভয় কেটে যায় অনায়াসে। ছাত্র হোস্টেলের বাইরে রাধাচূড়া গাছগুলো আছে বটে, তবে তাদের বিপ্লবীয়ানায় নিয়মমাফিক কাটছাঁটে সীমিত ঘেরাটোপ লেগেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোলাপবাগে প্রচুর গাছ কাটা পড়লেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য গোলাপবাগজুড়ে নতুন করে বহু গাছ লাগিয়েছ। ‘হিউম্যানিটিজ বিল্ডিং’ তো বটেই, অন্যান্য বিভাগের সামনেও বাগান হয়েছে। এসব গল্পের বাইরেও গোলাপবাগের নিজস্ব অনেক গল্প আছে৷ সেই গল্প, সেই কথাগুলোর কিছুটা প্রাচীন মেহগনি আর সেগুনগাছের গায়ে শেওলা হয়ে জমে আছে। কিছু কথা যথাযথ ঋতু পেলে ওই গাছেদের গায়ে লেপ্টে থাকা অর্কিডের ফুল হয়ে যায়৷ গ্রীষ্ম এলে কিছু কথা হিজল আর নাগচম্পা হয়ে ফোটে। কিছু কথা জানে ঝিলের পাশের ঋজু দেবদারু। ঝড়ের সময় যে অকারণেই ঋজুতা ভুলে পাশের দেবদারুর দিকে একটু বেশিই ঝুঁকে পড়ে কানে কানে কী যেন বলে৷ কিছু গাছ তখন এ শহরের বাতিওয়ালাদের মতো ছিল। রথতলার পরে ডিভিসি যাওয়ার যে রাস্তাটা ধানখেত পেরিয়ে সোজা চলে যেত সাইফোনের দিকে, সেই রাস্তাটা ছিল লাল মাটির। দুপাশে সবুজ আর মধ্যিখানে মোরাম বিছানো সেই পথটুকু যেন শহরের খুব কাছের কোনো এক মঙ্গলগ্রহ। ঢলদিঘিতে উঁচু পাঁচিলঘেরা পুকুরজোড়া বাড়িটার একদম প্রান্তে লাগানো বিশাল ছাতিমগাছটায় ফুল ফুটত ঝামরেঝুমরে। এ রকমই আর একটা ছাতিম ছিল কোর্ট চত্বরে এসবিআই এটিএমটার ঠিক পাশে। এই ছাতিমেরা এখন আর নেই। মালির বাগানের পেছনের রাস্তাটা প্রায় কাল্ট পর্যায়ে চলে গেছিল সেই সময়। এ শহরের সাইকেল-সওয়ারপ্রেমিকেরা তো বটেই, ভিন-শহর পেরিয়ে আসা প্রেমিকদের মুখে, এমনকি অর্কুট কমিউনিটিতেও শোনা যেত ‘মালির বাগানের পেছনের গলি’র নাম। শানবাঁধানো একটি পুকুরের সামনেটা ঢাকা থাকত আম, জাম, নারকেল, তাল ইত্যাদি বিবিধ গাছে। ওই রাস্তায় গ্রীষ্ম আসত কৃষ্ণচূড়া আর চাঁপাফুলের সঙ্গে। হিজল-হিমচাঁপা বকুল-জারুলও যে ছিল না এমন নয়, তবে হরিণীরা ছুটে আসত ওই নাগকেশরের নিচেই।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন