সময়টা ১০০ বছর আগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিপর্যস্ত অটোমান সাম্রাজ্যের ভাগ–বাঁটোয়ারা করতে ইতালির সান রেমো শহরে সমবেত হন গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী এবং জাপান, বেলজিয়াম ও গ্রিস সরকারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা সেখানে সিদ্ধান্ত নেন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ও মেসোপটেমিয়া বা ইরাক শাসিত হবে পশ্চিমা ম্যান্ডেট দ্বারা। সিরিয়া ফরাসি ম্যান্ডেটে আর ফিলিস্তিন ও ইরাক ব্রিটেনের ম্যান্ডেটে। তাদের এই ম্যান্ডেট বা শাসন করার কর্তৃত্ব মিলেছিল লিগ অব নেশনসের মাধ্যমে।
ব্রিটিশ ম্যান্ডেটে ফিলিস্তিনকে নেওয়ার এক সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল। তিন বছর আগেই ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার ব্যালফোর জায়নবাদী নেতা ব্যারন রথচাইল্ডকে ৬৭ শব্দের এক পত্রে জানান, ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমি গড়ে তোলার জন্য যা করা প্রয়োজন তার সবই করবে। এটি ‘ব্যালফোর ঘোষণা’ হিসেবে পরিচিত ।
কিন্তু ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ব্রিটেনের আইনগতভাবে বৈধ কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। ব্যাপারটা দাঁড়াল এমন: যাদের আবাসভূমি, তাদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে যাদের কোনোই অধিকার নেই, তারাই শুধু নিজেদের ঔপনিবেশিক ক্ষমতার জোরে তৃতীয় এক জনগোষ্ঠীকে সেই ভূমিতে মালিকানা স্থাপনে সম্মতি দিল।
এই সম্মতি জোরদার হলো ১৯২০ সালের ২৫ এপ্রিল সান রেমো সম্মেলনে গৃহীত কার্যবিবরণীতে। তাতে বলা হলো: ১৯১৭ সালের ৮ নভেম্বর ব্রিটিশ সরকারের (ব্যালফোর) ঘোষণা কার্যকর করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হলো ব্রিটিশ সরকারকে। সেটাকে অন্য মিত্র শক্তিগুলো সমর্থন করল এ জন্য যে ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি জাতীয় আবাস ভূমি স্থাপন করা যায়।
ব্যালফোর ঘোষণা যদি হয় ইহুদি রাষ্ট্র পত্তনের বীজ রোপণ, তো সান রেমো সম্মেলন হলো সেই বীজ থেকে হওয়া প্রথম চারাগাছ। এর মাধ্যমে ইউরোপ থেকে ইহুদিদের আরব ভূমিতে অভিবাসী হওয়া বেড়ে যায়। তবে ১৯৩৯-৪৫ সময়কালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের জার্মানিতে নাজিদের নির্বিচারে ইহুদি নিধন বা হলোকাস্ট যেন ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের আবাসভূমির বৈধতা নিশ্চিত করে। হলোকাস্টে ৬০ লাখ ইহুদি নিধনের জন্য দায়ী ও অপরাধী ইউরোপ নিজেদের প্রাপ্য শাস্তির খড়্গটা আরবভূমিতে বসিয়ে দেয়। ফলে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের রাষ্ট্র সময়ের ব্যাপার হয়ে যায়।