দেশের জনপ্রিয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘আড়ং’ এর অনলাইন শপের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে ও সময়মত পণ্য ডেলিভারি না করা, কোনো ধরনের নোটিফিকেশন ছাড়াই ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে কাস্টমার কেয়ারের অসদাচারণেরও। এসব অভিযোগ স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব ই-কমার্স। ঈদ সামনে রেখে লকডাউনের এ সময়টায় অনেকেই আউটলেট না ঘুরে বাসায় বসে কেনাকাটা সারতে চাইছেন। আর তাতেই যেন বাধছে বিপত্তি। আড়ংয়ের অনলাইন শপে পণ্য অর্ডারের সঙ্গে সঙ্গে বিল পরিশোধের টাকা কেটে নেওয়া হলেও মাস পেরিয়ে গেলেও ডেলিভারি পাওয়া যাচ্ছে না। আড়ংয়ের সঙ্গে ক্রেতাদের অনলাইনে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ই-মেইল। পণ্য না পেয়ে অনলাইনে ই-মেইল করে আড়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনো ফিরতি মেইল পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, ক্রেতাদের অভিযোগ- আড়ংয়ের ফেসবুকে পেজে এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করলেও নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। তথ্য-প্রমাণসহ গণমাধ্যমের হাতে এসে পৌঁছেছে এমন কিছু অভিযোগ। আড়ংয়ের অনলাইন সেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জনপ্রশাসনে সংযুক্ত সহকারী সচিব নওরিন হক জানান, তিনি তার বাচ্চাদের জন্য আড়ংয়ের অনলাইন শপে পোশাকের অর্ডার করেছিলেন এপ্রিল মাসের ২১ তারিখ। ২২ তারিখ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও কেটে নেওয়া হয়। প্রায় ১ মাস হতে চললো। এখনো তিনি পণ্যের ডেলিভারি পাননি। অর্ডার দেওয়ার পর প্রায় ২ সপ্তাহ নাগাদ পেন্ডিং ছিল তার অর্ডারটি। নওরিন বলেন, ‘আড়ং থেকে আমার পর পর দুটি অর্ডার বাতিল করে দেওয়া হয়। আমার অর্ডার আইডি ১০০১১৫৭৬৪ এবং ১০০১১৫৭৬৫। অর্ডার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার ব্যাংকের কার্ড থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। অনেকদিন পরও পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় আড়ংয়ে অনেকবার মেইল পাঠাই। কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয় না। এরপর কিছুদিন আগে অ্যাপসে ঢুকে দেখি তারা আমার ডেলিভারিটা বাতিল করে দিয়েছে। আমাকে কোনোপ্রকার নোটিশ ছাড়াই আমার অর্ডারটি বাতিল করেছে। এ ধরনের অপরিপক্ব কাজ এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ একটি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম হতাশা প্রকাশ করে জানান, ১৭ মে তার বাচ্চার জন্মদিন। করোনার এ সময়টা আড়ংয়ের আউটলেটে না গিয়ে বাচ্চার জন্য অনলাইনে অর্ডার করাকেই সুবিধাজনক মনে করেছিলেন তিনি। আমিনুল বলেন, ‘৮ মে ফজরের নামাজের পর আমি ৬টি পণ্য অর্ডার করি। আমার অর্ডার আইডি ১০০১২৮০৪৩। আড়ং থেকে আমাকে কনফারমেশন মেসেজ পাঠায় তিন থেকে চার কার্যদিবসের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হবে। কয়েকদিন পর আমার ডেলিভারি না আসায় ১৩ মে আমি আড়ংয়ের কাস্টমার কেয়ারে কল করি। কাস্টমার কেয়ার থেকে বলা হয় আমার অর্ডারটা প্রসেসিংয়ে আছে। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পেয়ে যাবো। তবে কোনো নিশ্চয়তা তারা আমাকে দিতে পারে না ঠিক কবে নাগাদ পণ্যটি পাবো।’ “একপর্যায়ে আড়ং জানায়, আপনি চাইলে আপনার অর্ডারটি বাতিলও করে দিতে পারেন। কথাটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগে। এ ধরনের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এমন কথা কখনো আশা করিনি।” তিনি বলেন, ‘আমি যখন আবার জানতে চাই, কবে পণ্য ডেলিভারি পাবো? তখন আমাকে বলা হয় আপনি আবার কল করে জেনে নেবেন।’ প্রত্যুত্তরে আমিনুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘একবার ফোন করলেই প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে আপনাদের কাস্টমার কেয়ারে কথা বলতে হয় সেখানে আবারও কল করে জেনে নিতে হবে বলছেন।’ এর উত্তরে আড়ং কাস্টমার কেয়ার থেকে বলা হয়, এটাই আমাদের সিস্টেম। এরপর ১৩ তারিখ রাতে আমিনুল ইসলাম আড়ংয়ের অ্যাপসে গিয়ে দেখতে পান তার অর্ডারটা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সোনালি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার সামিউল ইসলাম বলেন, ‘৮ মে আমি আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য ৪টা ড্রেস অর্ডার করেছিলাম। আমার অর্ডার আইডি ১০০১২৬৭৬৩। কিন্তু ৮ দিন পর কোনো ধরনের নোটিফিকেশন ছাড়াই আমার অর্ডারটি বাতিল দেখাচ্ছে।’ ৮ মে জাপান থেকে বোনের সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চার জন্য পোশাকের অর্ডার করেছিলেন আফসানা বেগম। অর্ডার আইডি ১০০১২৭৮৮৬। হঠাৎ করেই শনিবার আড়ংয়ের অ্যাপসে দেখতে পান তার অর্ডারটি বাতিল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আড়ংয়ের অনলাইন সেবা খুবই খারাপ। এটার উন্নতি করা দরকার।’ ক্রেতাদের এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আড়ংয়ের হেড অব ই-কমার্স মো. তানভীর বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের অনলাইনে অতিরিক্ত অর্ডার আসছে। এ কারণে ক্রেতারা অর্ডার দেওয়ার সময় এবং পণ্য ডেলিভারি পাওয়ারে ক্ষেত্রে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।’ এ বিষয়ে ক্রেতাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তানভীর বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। মে ১৬ তারিখের আগে করা যাবতীয় অর্ডার আমরা ২৩ মে’র মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে তানভীর বলেন, ‘মাঝে মাঝে সময়মতো আমরা আমাদের পণ্য ডেলিভারি করতে পারছি না। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আমরা অর্ডারটি বাতিল করে দিচ্ছি।’ কাস্টমার কেয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের ক্রেতাদের দেখা যাচ্ছে কাস্টমার কেয়ারে কল করলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করছি, যে কলগুলো আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। পুনরায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের।’ গ্রাহকদের ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করার জন্য উৎসাহিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে ই-মেইল করা হলে আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ই-মেইলের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।’