চলচ্চিত্রের শাকিবের জন্ম আমার ড্রয়িংরুমে—ওমর সানী

প্রথম আলো প্রকাশিত: ০২ মে ২০২০, ১৮:২৯

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব ঢালিউডের একসময়কার নায়ক ওমর সানী। করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে বা বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে ভিডিও বার্তা বা পোস্ট দিচ্ছেন তিনি। এর বাইরেও সমসাময়িক নানা ঘটনা নিয়ে সরব থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাঝেমধ্যে নিজের বক্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। অনেক সময় হয়ে যান ভাইরাল নয়তো উপহাসের শিকার। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। দুদিন আগে প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খানকে নিয়ে ফেসবুকে আপনার দেওয়া একটি স্ট্যাটাস আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে। পরে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন? দেখুন, সমালোচনা করেছেন খুব কম মানুষ। শতাংশে এরা খুবই কম। আমাদের দেশের মানুষের অনুপাতে সেটা রোহিঙ্গাদের সংখ্যার মতো। স্ট্যাটাসটা নিয়ে বেশির ভাগ মানুষ প্রশংসা করেছেন। ইরফান খান প্রথম আলোর একটি সাক্ষাৎকারে তিন দশকের অভিনয়জীবন অস্বীকার করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ’৯৫ সালে তাঁর সিনেমায় আসা। আর আমি এসেছি ’৯১ সালে ‘চাঁদের আলো’র মধ্য দিয়ে। তারও বেশ আগে ‘মশাল’ ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্র করেছি। এ কারণে আমি বলেছিলাম, তিনি আমার পরে এসেছেন। হয়তো আমার তথ্যগত ভুল হয়েছে। কিন্তু আমি তো তাঁকে অসম্মান করে কথা বলিনি। তাঁকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেছি। তিনি নিশ্চয়ই শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান বা অক্ষয় কুমারের সারির অভিনেতা নন। তিনি একজন ভালো মানের শিল্পী, সু–অভিনেতা। আর আমি তাঁকে চিনেছিই ২০০০ সালের দিকে। তিনি কিন্তু বাংলাদেশে ‘ডুব’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। সফল হয়েছেন কি? যাঁরা আমার লেখা নিয়ে সমালোচনা করেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানাই। তাঁদের ইচ্ছা হয়েছে, সমালোচনা করেছেন। এ ব্যাপারে আর কিছু বলার নেই। ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় ইরফান খানের মৃত্যু ঘিরে এ দেশের মানুষের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও বলেছেন... হ্যাঁ, বলেছি। ইরফান খানের মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, আমার তো মনে হয় খোদ ভারতের মানুষেরাও সেই পরিমাণ হা-হুতাশ করেননি। একটা কথা আজ বলতে চাই, আমাদের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক সাহেব যখন মারা গেলেন, তখন ভারতের মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখেছেন আপনারা? কলকাতাভিত্তিক কয়েকটি পত্রিকায় ছোট করে খবরটি বেরিয়েছিল। এ ছাড়া বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ যখন মারা গেলেন, সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মৃত্যুতেও ভারতের মানুষের সে রকম প্রতিক্রিয়া আমি দেখিনি। আমরা তাঁদের অভিনেতাদের নিয়ে যেভাবে মাতামাতি করি, তাঁরা কিন্তু আমাদের নিয়ে সে রকম করে না। ১৯৯৭ সালে ভারতে দুটি ছবিতে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের চিনতে পেরেছি। কিছুদিন আগে ফেসবুক লাইভে চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ের শিল্পী-কলাকুশলীদের সাহায্য করা প্রসঙ্গে শাকিব খানকে যে উপদেশমূলক কথা বলেছিলেন, বিষয়টি শাকিবের ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে অনেকে আপনার সমালোচনা করেছেন। পরে আপনার সেই বক্তব্যও ট্রল হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শাকিবকে নিয়ে এ কথা বলার কারণ কী? শাকিব আমার ছোট ভাইয়ের মতো। তাই অধিকার থেকেই কথাগুলো বলেছিলাম। চলচ্চিত্রের শাকিবের জন্ম হয়েছে আমার ড্রয়িংরুম থেকে। সেই দৃশ্য এখনো খুব মনে পড়ে। তখন মৌসুমীর ছোট বোন ইরিন চলচ্চিত্রে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান আমার উত্তরার বাসায় রানা নামে একটি ছেলেকে নিয়ে হাজির। ড্রয়িংরুমে ছিলাম আমি, মৌসুমী, ইরিন। সোহান ভাই মৌসুমীকে বললেন, তুমি যদি রাজি থাকো, তাহলে এই ছেলেকে ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিতে ইরিনের বিপরীতে নায়ক বানাব। তা না হলে রিয়াজকে নিয়ে নেব। অনেক আলাপ-আলোচনার পর মৌসুমী ছেলেটির মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিল। এই সেই ছেলে, আজকের শাকিব খান। তারপর থেকে সে আমাকে ভাইয়া আর মৌসুমীকে ভাবি বলে ডাকে। এর আগে নিজেও এক অনুষ্ঠানে সেদিনের সেই ড্রয়িংরুমের গল্প বলেছিল শাকিব। ফেসবুক লাইভে শাকিবকে নিয়ে কথা বলেছি এই কারণে যে শাকিবের অর্থ-সম্পদ, সম্মান—সবই আছে। তাঁর পারিশ্রমিক আমাদের মতো শিল্পীদের চেয়ে বিশ গুণ বেশি। এই বিপদের দিনে ঘরে বসে যদি ১০-২০ লাখ টাকা সে চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য খরচ করে, তারা তিন মাস চলতে পারে। তাহলে এই কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর খাবারের সন্ধানে পথে পথে ঘুরতে হয় না।মাঝে চলচ্চিত্রের জন্য সরকারি প্রণোদনার দাবি করেছিলেন। সেটা নিয়ে কম কথা হয়নি। অনেকেই আক্রমণ করে কথা বলেছেন, তাচ্ছিল্য করেছেন আপনাকে। আপনাকে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। কেন? আমি কোনো যৌক্তিক বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দিলে বা লাইভে এলে অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। বলেন, আমি নাকি পাগল, উন্মাদ, বেশি কথা বলি। প্রণোদনার কথা বলতে গিয়ে এই রকম কথা শুনেছি। অথচ দেখেন, কয়েক দিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় দেখলাম, গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত প্রণোদনার কথা বলেছেন। তাঁকে নিয়ে তো কোনো সমালোচনা নেই, আমি বললেই ‘পাগল’? চলচ্চিত্রের যা অবস্থা, করোনাকাল হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু সিনেমাকে বাঁচানো যাবে না। একমাত্র সরকারই প্রণোদনা দিয়ে এই শিল্পকে বাঁচাতে পারে। এ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।আপনিও তো একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। চলচ্চিত্রের মানুষদের নিয়ে গঠিত ফিল্ম ক্লাবের চিফ অ্যাডমিনও। এই দুর্যোগে আপনি কী করছেন? আমি ও মৌসুমী দুজন মিলে কিছু প্রোডাকশন ম্যানেজার, প্রোডাকশন বয়, নাচের লোক এবং কিছু স্বল্প আয়ের শিল্পীদের সহযোগিতা করেছি। এর বাইরে এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ফিল্ম ক্লাব কমিটির লোকজনকে এবং ক্লাবের কর্মচারীদের উপহারসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি নিজের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কিছু অসচ্ছল মানুষ আছেন, এই দুঃসময়ে তাঁদেরও সহযোগিতা করতে হচ্ছে। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তো বেড়েই চলেছে। সামনে আরও কঠিন দিন আসতে পারে। চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জন্য নতুন করে ভাবছেন কিছু? দেখুন, অবস্থা আরও খারাপ হলে আমার নিজেরও অন্যের কাছ থেকে ধার করা লাগতে পারে। এখন তো আমাদের কোনো আয় নেই। একটি রেস্তোরাঁ দিয়েছি, সেটিও বন্ধ। ২০–২৫ জন কর্মচারীকে বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। তারপরও চলচ্চিত্রের মানুষদের নিয়ে ভাবছি। আরেক বড় ভাই সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতায় রোজার মধ্যে আরও কয়েক শ প্যাকেট খাবারের ব্যবস্থা করছি।কত দিন হলো বাসায় আছেন? সময় কাটছে কীভাবে? ৪০ দিনের ওপরে। এর মধ্যে এক দিন এক ঘণ্টার জন্য এফডিসিতে গিয়েছিলাম। বাসায় বসে আমি, মৌসুমী ও ফারদিন মিলেমিশে রান্না করছি। রান্নাটা আমি আগেও উপভোগ করতাম। এ ছাড়া নেটফ্লিক্সে হলিউড, বলিউডের মুভি দেখছি। প্রতিদিন নিয়ম করে ট্রেডমিল করি। বাসায় বসে অনেকের ওজন বাড়ছে, আর আমার সাত কেজি কমেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো চ্যানেল বা সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে করোনা–সচেতনতা নিয়ে অনলাইনে যুক্ত হচ্ছি বা ভিডিও করে পাঠাচ্ছি। এ জন্য বাসায় নিজেকে পরিপাটি হয়েও থাকতে হচ্ছে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us