ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। এনার খবরে প্রকাশ দিল্লিতে কুলদীপ নায়ারকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু উপরোক্ত কথা বলেন। ১৯৭২ সালের ২৬ এপ্রিল এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যেকোনও রকম মীমাংসা তার দেশের সম্মতি ছাড়া করা যাবে না। খবরে বলা হয়, পাক-ভারত আলোচনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ভারত তার পছন্দসই যে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু যুদ্ধবন্দিদের বিষয়টি হচ্ছে উভয় দেশের যৌথ দায়িত্ব। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের কথা পুনরুল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাঙালিরা অকৃতজ্ঞ নয়। কিন্তু বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ। তেমন দেশ নয় যেমন করে পাকিস্তানিরা দেখাতে চায়। যুদ্ধবন্দিদের বিচার সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি বুঝতে পারেন না যে গণহত্যার জন্য যারা দায়ী তারা কী করে এর পরিণতির হাত থেকে রেহাই পাবে বলে মনে করে।পাকিস্তানই এই অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে পারে একথা বলা হলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ওরা কারা? অপরাধ করেছে বাংলাদেশে, পাকিস্তানে নয়। বাঙালিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার লোকদের পাকিস্তানের অবিলম্বে ফেরত দেওয়া উচিত। বিহারিদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিহারিদের হত্যা করা হচ্ছে বলে পাকিস্তান প্রচার করা হচ্ছে। তাদের জন্য এত দরদ থাকলে বাংলাদেশ থেকে তাদের নিয়ে যায় না কেন?তিনি বলেন, রাজনীতি নিয়ে ভুট্টোর আর খেলা করা উচিত নয়। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলে কার কি এসে যায়। তিনি যদি অন্ধকারে থাকতে চান তাহলে আমি কি করতে পারি।ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসঙ্গেবঙ্গবন্ধু বলেন আমি জানি আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের সাহায্যপুষ্ট একশ্রেণির লোক ভারতের বিরুদ্ধে কানাঘুষা করছে কিন্তু তারা আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না। ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন এটা একটি চুক্তি। বহু দেশে এ ধরনের চুক্তি রয়েছে, এটা কারও বিরুদ্ধে নয়।ইজারাদারি প্রথার অবসানগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার হাট বাজারের ইজারাদারি প্রথার অবসান ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালের ২৬ এপ্রিল সরকারের ভূমি প্রশাসন ভূমি সংস্কার ও ভূমি রাজস্ব মন্ত্রণালয় থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয় প্রত্যেক হাটবাজারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম গ্রাম বাংলার মেহনতি মানুষের স্থানীয় প্রতিনিধিদের উপর হাট বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নতি প্রভৃতি কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।গণ কমিটির তত্ত্বাবধানে হাট-বাজারের নির্দিষ্ট ন্যায্য হারে তোলা আদায় করা হবে। আদায়কৃত তোলার মোট আয় এর অংক থেকে এক তৃতীয়াংশ অর্থ সংশ্লিষ্ট হাটবাজারের উন্নতির জন্য সুষ্ঠুভাবে ব্যয় করা হবে। এক তৃতীয়াংশ অর্থ উন্নয়ন কমিটির তহবিলে জমা হবে এ টাকা থানার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ টাকা সরকারি তহবিল ব্যয় করা হবে।