শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী ছড়িয়ে দেওয়া হবে দেশে
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২০, ১০:১৪
শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ কারণে ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রুণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দুধের চাহিদা পূরণে এই দুটি জাতের গরু সম্প্রসারণ করা হবে দেশব্যাপী। প্রাথমিকভাবে ৩৩৩৩ মাত্রার শাহীওয়াল ও ৩০ হাজার মাত্রার ফ্রিজিয়ান গরুর ৮৩ হাজার সিমেন আমদানি করা হবে। ৪০টি পিউর ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী, বকনা, ষাঁড় আমদানি করা হবে। এর পরে দেশি জাতের গাভীর মাধ্যমে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু সম্প্রসারণ করা হবে। শাহিওয়াল গরু হচ্ছে জেবু জাতের গরু। মূলত দুধ উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয়। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শাহিওয়াল জাতের একটি গাভী দৈনিক ২০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে পৃথিবীর একক জাতের মধ্যে মোট সংখ্যায় দ্বিতীয় এবং সিঙ্গেল পারপাস ডেইরি গরু হিসাবে সংখ্যায় প্রথম গরুর নাম হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান। ল্যাটিন আমেরিকাতে হোলস্টাইন এবং ইউরোপ ও এশিয়া আফ্রিকাতে ফ্রিজিয়ান নামে ডাকা হয়। বিশ্বের সবচে বেশি দুধ উৎপাদনকারী গাভী এবং বিশ্বের মোট উৎপাদিত দুধের প্রায় ৫০ শতাংশ হোলস্টাইন থেকেই উৎপাদিত হয়। এটাকে মূলত সিঙ্গেল পারপাস (শুধু দুধ উৎপাদন) গরু হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও এই জাতের ষাঁড়ও বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। দৈনিক ৪০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে এই জাতের গাভী। সারাবিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান প্রাণিসম্পদের মধ্যে অন্যতম গবাদিপশু। উন্নয়নশীল বিশ্বে মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহে গরু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশে গবাদিপশুর সংখ্যা আড়াই কোটি। তবে দেশে সংখ্যাগত দিক দিয়ে গরুর সংখ্যা বেশি হলেও অর্থনীতিতে সেইভাবে অবদান রাখছে না। বিশাল পরিমাণে গবাদিপশুর বিপরীতে প্রয়োজনীয় দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যাদির মধ্যে শতকরা ৫৬ ভাগের বেশি আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে দৈনিক দুধ গ্রহণের হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে গরুর সংখ্যা বেশি হলেও গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সেইভাবে নেই। তাই আমরা শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। একটা শাহিওয়াল জাতের গাভী পাকিস্তানে দৈনিক ২০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী দৈনিক ৪০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। শংকরজাতের মাধ্যমে প্রথমে আশানুরুপ দুধ পাওয়া যাবে না। তবে পর্যায়ক্রমে আমরা সফলতা পাবো। তিনি আরো বলেন, আমাদের কিছু উন্নত জাতের গাভী আছে। শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান গাভী শংকরের মাধ্যমে দেশের চাহিদা আরো পূরণ হবে। শংকরের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি ফ্রিজিয়ান গাভী থেকে দেশে ৩০ লিটার দুধ পাবো, অন্যদিকে শাহিওয়াল গাভী থেকে ২০ লিটার পাবো। সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় জাত সম্প্রসারণে চারজন কর্মকর্তাকে ৩০ দিন মেয়াদি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, দুই জন কর্মকর্তাকে ৩০ দিন মেয়াদী ভ্রুণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বিষয় উচ্চতর বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়াও ৫০০ জন কর্মকর্তাকে দুই দিন মেয়াদি প্রশিক্ষণ, ২৪ হাজার ৮৪০ জন গবাদি প্রাণী খামারিকে তিন দিন মেয়াদি প্রশিক্ষণ, গবাদি পশু চিহ্নিতকরণ ও ডেটা বেইজ তৈরিকরণ কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তা ভাতা দেয়া হবে। ৩০০টি গাভীর প্রতিটির জন্য দুই হাজার টাকা দেওয়া হবে। এক হাজার এলিট গাভীসহ ৩০ হাজার গবাদি প্রাণীতে অ্যানিমেল আইডেন্টিফিকেশন ও রেকর্ডিং সিস্টেম পদ্ধতি চালু করবে সরকার।