বদলে যাওয়া সময়ে বদলে যাওয়া পৃথিবী! মানব–বসবাসের উপযোগী এই গ্রহটির চিত্র যেন জ্যামিতিক হারে পরিবর্তন হচ্ছে। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী মানুষের হাতেই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে খোয়া যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। আদিকালে মানুষ টিকে থাকার জন্য পরাজিত করেছে অনেক হিংস্র প্রাণিকুলকে। কোনো ধারালো অঙ্গ না থাকা সত্ত্বেও কেবল বুদ্ধির জোরে অনেক ধারালো অঙ্গের প্রাণীকে পরাভূত করেছে মানুষ। আজ মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার মতো কোনো প্রজাতি নেই এই পৃথিবীতে। একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করেছে মানুষ। আর প্রতিযোগিতার অভাবে নিজ প্রজাতির সঙ্গেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এই গ্রহের বাসিন্দারা। মানুষের খুব সহজাত প্রবণতাই হচ্ছে কোনো দ্বন্দ্বে জড়ানো। শান্ত থাকাটা মনুষ্য প্রজাতির রক্তে নেই। আর সেই ধারাই আমরা পৃথিবীর প্রতি প্রান্তে দেখতে পাচ্ছি। এই পৃথিবী দুটি বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী, মানুষের কল্যাণে নয় বরং শক্তিমত্তার প্রয়োগে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করে আধিপত্য বিরাজের নিমিত্তেই এই যুদ্ধ। পৃথিবীর মানুষ দেখেছে বিনাশ কেমন, হত্যালীলার বোধ কেমন, আর কতটা হিংস্র হতে পারে মানুষের প্রতি মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী কিছুটা শান্ত ছিল। সর্বোপরি মানুষের সমাজকাঠামোতে এসেছিল বিরাট পরিবর্তন। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ নানান আঞ্চলিক সংগঠন অর্থের প্রসার ঘটিয়ে কায়েম করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ, জীবনযাত্রার মানের ওপর পুরো বিশ্বকে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে দাঁড় করায় সংস্থাগুলো! পৃথিবী কোনো দিকে যাবে, পুঁজিবাদ নাকি সমাজতন্ত্র এ নিয়ে বিরোধ পৃথিবীকে করেছে বিভক্ত, জাতিতে জাতিতে আবার যেন এক ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ! পৃথিবী কার অধীনে থাকবে, আমেরিকা নাকি রাশিয়া, এই প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না অনেক দিন। নিজেদের সব শক্তিমত্তা দিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক দিক থেকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার যে প্রচেষ্টা পৃথিবীকে, সেটাকে বিশ্ব শীতল যুদ্ধ হিসেবেই জানি আমরা, যুদ্ধ নয় তবু যেন এক ভয়াবহ আগ্রাসন একে অপরের ওপর। শীতল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের ফলে পৃথিবী পায় নতুন কাঠামোএই শীতল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের ফলে পৃথিবী আবার নতুন এক কাঠামো পায়। উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে ভাগ হয়, প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্বে। কোনো পক্ষ অবলম্বন না করা নিরপেক্ষ দরিদ্র দেশগুলো নাম পায় তৃতীয় বিশ্ব নামে। আর এই তৃতীয় বিশ্বকেই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে থাকে পুঁজিবাদ সংশ্লিষ্ট আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।