মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে অনশনে পাটকল শ্রমিকরা
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলের শ্রমিকরা। খুলনা অঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে খুলনায় রয়েছে সাতটি ও যশোরে দু’টি। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো-ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। আর যশোরের দু’টি জুট মিল হলো-কার্পেটিং ও জেজেআই। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে মঙ্গলবার শুরু হওয়া অনশনে বুধবার সকালে প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক হিরন ও খায়েরসহ ৭ শ্রমিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনশনে থাকা আরো অনেকেই অসুস্থতা বোধ করছেন।রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড শীত ও ক্ষুধার কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সমস্যা সমাধানে ঢাকায় মঙ্গলবার বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ না হওয়ায় শ্রমিকরা অনশন অব্যাহত রেখেছেন। যতই কষ্ট হোক, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। তিনি জানান, শ্রমিকরা নিজ নিজ মিল গেটের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন। জুট মিলগুলোতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এছাড়া স্টার জুটমিলের শ্রমিক বাবুল, ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিক সুলতান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সুলতানের স্যালাইন চলছে।কাঁথা-বালিশ, লেপ, কম্বল নিয়ে আমরণ অনশন পালনকারী খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা রাতযাপন করেন। শ্রমিকদের এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তাদের পরিবারের সদস্যরাও। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে না ফেরার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।শ্রমিকরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত বাতিল ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্রাচ্যুইটির টাকা দেওয়াসহ ১১ দফার দাবি জানিয়ে আসছি। দীর্ঘদিন আন্দোলন চললেও এ পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণ হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে। সংগ্রাম পরিষদের নেতারা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে ৮টি অংশ নিচ্ছে। শুধু যশোরের জেজেআই আন্দোলনের অন্যান্য কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি। সকাল থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে কর্মসূচি শুরুর সময় নির্ধারণ করা হয় দুপুর থেকে। এর আগে গত রোববার খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ওই আমরণ অনশন কর্মসূচি সফল করতে শপথ নিয়েছিলেন। নিজ নিজ মিল গেটে অনুষ্ঠিত সভা থেকে শ্রমিকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওই কর্মসূচি সফল করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এসময় খুলনা শিল্পাঞ্চলের পাটকলগুলোর গেটে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, সোমবার রাত থেকেই অনশনের জন্য প্যান্ডেল প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে প্যান্ডেলের ভেতরে শ্রমিকরা আসতে শুরু করে। কানাই কানাই পূর্ণ হয়। শ্রমিকরা অনেকেই প্যান্ডেলের ভিতরে থাকতে পারছেন না। কাঁথা বালিশ নিয়ে তারা এখানে রাত-যাপন করেছেন। দিন-রাত শ্রমিকরা অনশনে থাকবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। খুলনা অঞ্চলে মোট রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় রয়েছে সাতটি ও যশোরে রয়েছে দু’টি। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। আর যশোরের দু’টি জুট মিল হলো-কার্পেটিং ও জেজেআই। মহানগরীর খালিশপুরে অবস্থিত চারটি পাটকল। দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকরা অবস্থান নেন মিলের সামনের বিআইডিসি সড়কে। প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে কাপড় টানিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করে অনশনে বসেছেন। বাকী সড়কও শ্রমিকরা আটকে রেখেছে। এরপরই রয়েছে প্লাটিনাম জুট মিল। ওই জুট মিলের শ্রমিকরা পুরো সড়ক জুড়েই অনশনের স্থল তৈরি করেন। ফলে সড়কটি বন্ধ হয়ে গেছে। চলাচল করতে পারছে না কোন যানবাহন। এছাড়া ওই এলাকায় থাকা খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছেন নিজ নিজ মিল গেটে। দুপুর থেকেই কাঁথা-বালিশ নিয়ে শ্রমিকরা অনশনস্থালে আসতে শুরু করে। আশ্রয় নেন প্যান্ডেলের অভ্যন্তরে। প্যান্ডেলের ভেতরেই থাকবেন রাতেও। সেখানেই আদায় করেন নামাজ। ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকদের অনশনস্থলে কথা হয় শ্রমিক আব্দুর রহমান ও মো. জুয়েলের সাথে। তারা বলেন, শ্রমিকদের মূল দাবি মজুরি নিয়ে নয়। শ্রমিকরা মূলতঃ আন্দোলন করছেন মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাটকলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রক্রিয়া বাতিল ও পাটখাতে পযাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে। ওই দাবিগুলো আদায় হলেই তাঁরা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ওই পাটকলগুলো বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত থাকায় প্রভাব পড়ে শ্রমিকদের ওপর। মিলগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকা ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারার কারণে শ্রমিকদের মজুরিও ঠিক মতো পরিশোধ হয় না। এসব কারণে শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। সর্বশেষ নবেম্বরের শেষ দিক থেকে ১১ দফা দাবিতে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছেন শ্রমিকরা। ছয় দিনের কর্মসূচির সর্বশেষ কর্মসূচি হলো আমরণ অনশন করা। একই দাবি আদায়ে স্টার জুট মিলের প্রধান ফটকের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিকরা। আটরা শিল্প এলাকার আলিম ও ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা তাদের পোষ্যদের নিয়ে গতকাল দুপুর ২টায় ইস্টার্ন জুট মিল ১নং গেটে আমরণ গণ-অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন। ইস্টার্ন জুট মিল সিবিএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আকছার আলীর সভাপতিত্বে আলিম জুট মিলের মো. আমিরুল ইসলাম ও ইস্টার্ণ জুট মিলের মো. সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন আলমগীর হোসেন, আ. হক মহলদার, হাফেজ আ. সালাম, আমিরুল ইসলাম, ইজদান আলী, মোজাম্মেল হক, হাসান শরীফ, ৭আ. রব মোল্লা আ. রশিদ, আ. মজিদ মোল্লা, শেখ জাকারিয়া, সর্দার আনোয়ার হোসেন, মেহেদি হাসান বিল্লাল, মনিরুল ইসলাম আকুঞ্জি, শেখ শামিমুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী অনশন চলাকালে সন্ধায় আন্দোলনরত শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায় সঙ্গত দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আটরা গিলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম।