নানা আলোচনা-সমালোচনা ছাপিয়ে কর্ণফুলী নদীপথে চালু হলো ওয়াটার বাস সার্ভিস। সোমবার সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে প্রথম ওয়াটার বাস যাত্রা শুরু করে। মাত্র ১৮ মিনিটে ওয়াটার বাসটি চট্টগ্রাম বন্দরের নির্মিত পতেঙ্গা জেটিতে গিয়ে পৌঁছে। প্রবাসী বা বিদেশে যাতায়াতকারী বিমান যাত্রীদের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে এই ওয়াটার বাস চালু করলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পণ্য পরিবহনে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়কে যানজট সৃষ্টির দায় চট্টগ্রাম বন্দরের উপর দীর্ঘদিনের। ফলে যানজট এড়াতে কর্ণফুলী নদীতে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, দীর্ঘ তিন বছর ধরে ওয়াটার বাস সার্ভিস প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। গত একমাস ধরে কর্ণফুলী নদীতে ওয়াটার বাস চলাচলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। সোমবার সকাল ৭টায় ওয়াটার বাস চালু করা হয়। তিনি আরো বলেন, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আকাশপথে উড়োজাহাজের সময়সূচি অনুযায়ী ওয়াটার বাস চলাচলের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন সদরঘাট থেকে সকাল ৭টা, ৮টা, দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট, বেলা ৩টা ও সন্ধ্যা ৭টায় পাঁচটি ওয়াটার বাস পতেঙ্গার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ফিরতি পথে পতেঙ্গা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা, বেলা সাড়ে ১১টা, বেলা ২টা ২৫ মিনিট, বিকেল সাড়ে ৪টা ও রাত ৯টা ১৫ মিনিটে সদরঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ওয়াটার বাস পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল) ও এসএস ট্রেডিং। তারা প্রাথমিকভাবে দুটি ওয়াটার বাস নামিয়েছে। ওয়াটার বাস দুটি প্রতিদিন ১০ বার আসা-যাওয়া করবে। জানুয়ারিতে আরও দুটি যুক্ত হবে। এসএস ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বাব হোসেন বলেন, বিমানযাত্রীদের ক্ষেত্রে পতেঙ্গা থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে। শুরুতে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত করা হলেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় তা কমিয়ে ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সদরঘাট থেকে ওয়াটার বাস চালু নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রবাসী বা বিদেশযাত্রী ছাড়াও পর্যটকদের জন্য এ সার্ভিস সুবিধাজনক না করলে ঢাকার মতো তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ পেয়েছে। এ জন্য ভাড়া কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সমপাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, নগরীর যে কোন স্থান থেকে সড়কপথে পতেঙ্গায় পৌঁছাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। যানজট হলে তা তিন থেকে চার ঘণ্টাও লেগে যায়। ফলে বিমানযাত্রী অনেকেই ফ্লাইট ধরতে পারে না। সে হিসেবে নদীপথে ওয়াটার বাসে মাত্র ১৮-২০ মিনিটে সদরঘাট থেকে পতেঙ্গায় পৌঁছানো সম্ভব। তবে সড়কপথের চেয়ে ওয়াটার বাসে নির্ধারিত ভাড়া তিন থেকে চারগুণ বেশি। তাছাড়া সদরঘাট না হয়ে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হলে যাত্রী সুবিধা বাড়তো।