জামায়াতের নবনির্বাচিত আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে ঘিরে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। আমীর নির্বাচিত হওয়ার পর দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে তার মত বিরোধ এবং পরবর্তী সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচন নিয়ে দলে দুটি বলয় তৈরি হয়েছে। সেক্রেটারি জেনারেল পদে মনোনয়ন ঘিরে একাধিক পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। সেক্রেটারি জেনারেল পদে মনোনয়ন ঘিরে নতুন আমির শফিকুর রহমানের ওপর এই পক্ষগুলো অসন্তুষ্ট। তিনি দলে নিজস্ব প্রভাব-বলয়ের সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ তাদের। আমীর নির্বাচিত হলেও এখনো তিনি শপথ নেননি। আমীর নির্বাচনের পর জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার নির্বাচন শেষ হয়েছে। শিগগির মজলিশে শূরার অধিবেশন ডাকা হবে অথবা, নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে নতুন আমীর শপথ নেবেন। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জামায়াতের আমীর সেক্রেটারি জেনারেল পদে মনোনয়ন দেন। আমীর পদে শপথের পর তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্য থেকে একজনকে সেক্রেটারি মনোনীত করবেন। সেক্রেটারি পদে এখন পর্যন্ত ছয়জন নেতার নাম আলোচিত হচ্ছে। তারা হলেন: কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর (সহ সভাপতি) মিয়া গোলাম পরওয়ার, নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম মাছুম, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি তাসনীম আলম। তাদের মধ্যে বেশি আলোচনা রফিকুল ইসলাম খানকে নিয়ে। ডা. শফিকুর রহমান মাওলানা এটিএম মাছুমকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে মনোনীত করতে চাইছেন বলে আলোচনা আছে। তবে এই নেতার ছেলে মালয়েশিয়ায় থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামায়াতের আদর্শ বিরোধী বিভিন্ন মন্তব্য করায় করেছেন বলে আলোচনা রয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরীর আমীর থেকে ডা. শফিকুর রহমান জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জনারেল হিসাবে মনোনীত হন ডা. শফিকুর রহমান। তাকে কেন্দ্রে উঠিয়ে আনার ব্যাপারে বিদায়ী আমীর মকবুল আহমাদের ভূমিকা ছিল। তিনি নেতৃত্বে আসার পরই ধীরেচলা নীতি গ্রহণ করেন। সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অবস্থায় গ্রেপ্তার হন ডা. শফিকুর রহমান। প্রায় ১ বছর পর ২০১৩ সালের নভেম্বরে তিনি সব মামলায় জামিন পেয়ে মুক্তি পান। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান। তিনি মুক্তি পাওয়ার পর আবার দায়িত্ব গ্রহণে মরিয়া হয়ে উঠেন। কিন্তু, ওই সময়ে দলের নির্বাহী পরিষদের অধিকাংশ নেতা ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদকে তাকে দায়িত্ব না দিতে পরামর্শ দেন। কিন্তু, নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে তিনি আবার ডা. শফিকুর রহমানকে দায়িত্ব দেন। ওইসময় থেকে বিরোধের নতুন মাত্রা যোগ হয়। রফিকুল ইসলাম খানও মকবুল আহমাদের প্রতি বিরক্ত হন। ডা. শফিকুর রহমান সেই সময় থেকে রফিকুল ইসলাম খানের বলয়ের নেতাদের দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী বলে অভিযোগ আসে। সূত্র জানায়, সারাদেশে জামায়াতের ৭৫ হাজার রুকন (সদস্য) রয়েছেন। অতীতে আমীর প্যানেল গঠনের ক্ষেত্রে নারী রোকনদের কোন ভূমিকা ছিল না। কিন্তু, এবার নারী সদস্যদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়। ডা. শফিকুর রহমানের জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে নারী ভোট প্রধান ভূমিকা রাখে এমন আলোচনা রয়েছে। এবারের আমীর নির্বাচনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে আমীর করার জন্য উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের নেতারা আগ্রহী ছিলেন। সূত্র জানায়, সিলেটে মহানগর জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালনকালে সিলেটের আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে শফিকুর রহমানের। এছাড়া সরকার ঘনিষ্ট সূত্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলেও নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা আছে।