ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা বাড়ানো ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ‘সেফ সিটি প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকার বিভিন্নস্থানে ১৫ হাজার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার ৬ হাজার কিলোমিটার এলাকায় ওই ক্যামেরাগুলো বসানো হবে। আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সরকারি কেপিআই ভুক্ত এলাকা, কূটনৈতিক জোন, ভিআইপি রোড, ফ্লাইওভারের সংযোগস্থল ও অপরাধ প্রবন এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। প্রত্যেকটি ক্যামেরা তারের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপিত হবে ডিএমপির ৬ জোনের পুলিশের ডিসি অফিসের সঙ্গে। এছাড়াও ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের মাধ্যমে সেগুলো আইপি ঠিকানার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ক্যামেরায় কোন অপরাধ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল সেন্টার থেকে ওয়াটকির মাধ্যমে থানা পুলিশ ও টহল পুলিশকে জানানো হবে। এছাড়াও ওই এলাকায় কোন অপরাধ ঘটলে অপরাধীকে চিহ্নিত করার জন্য সিসি টিভির ফুটেজ দেখা হবে। বিশেষ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ওই ক্যামেরাকে গুরুত্বসহকারে ব্যবহার করা হবে। যেসব যানবাহন আইন লংঙ্ঘন করে সড়কে চলাচল করবে তাদের নামে ভিডিও মামলা আরও বেশি ত্বরান্বিত হবে বলে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে জানান, ‘প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শহরের বিভিন্নস্থানে ক্যামেরা বসিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা গেছে, ৫ বছর আগে ঢাকা শহরের বিভিন্নস্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়। ওই ক্যামেরার ফুটেজগুলো দেখে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতো ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার। কিন্তু, সড়কের মোড়ে মোড়ে ওই ক্যামেরাগুলো এখন প্রায় অকেজো। যেগুলো নষ্ট হয়নি ওই ক্যামেরাগুলোও সঠিকভাবে ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারছেন না। সূত্র জানায়, কিছু এলাকার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের অল্প পরিমানের সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেগুলো দিয়ে যানবাহনের বিরুদ্ধে ভিডিও মামলা করা হয়। এবার বড় পরিসরে সিসি ক্যামেরা দিয়ে ট্রাফিক আইন নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামীকে যে মাইক্রোবাসে অপহরণ করা হয়েছিল ওই মাইক্রোবাসটিকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে চিহ্নিত করেছিল ঢাকার ডিবি পুলিশ। গুলিস্তান ফ্লাইওভারের প্রবেশদ্বারে যে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল সেই সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এতে অপরাধী দ্রুত ধরা পড়ার ভয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ছেড়ে দেয়। সেফ সিটির আওতায় সারা ঢাকায় ১৫ হাজার ক্যামেরা বসলে আরও বেশি ট্রাফিক আইন নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ প্রবনতা কমে আসবে বলে জানা গেছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সেফ সিটির আওতায় আসবে। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার সড়কে বসবে সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরাগুলো জার্মানী থেকে আনা উন্নত প্রযুক্তির। যা দ্রুত ছবি শনাক্ত করবে। ছবি দেখে যে কোনো অপরাধীর এনআইডি থেকে ছবি নিয়ে শনাক্ত করবে পুলিশ। পর্যায়ক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সারাদেশের সব করপোরেশনকে এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসবে। ডিএমপি জানায়, ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। ওই শাখার একটি টিম ওই ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। কোন ক্যামেরা থেকে ছবি সরবরাহ না করলে মজুদ থাকা ক্যামেরা দিয়ে দ্রুত সেখানে বসানো হবে যাতে ট্রাফিক আইন নিয়ন্ত্রণ থাকে। সূত্র জানায়, যেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। যাতে অপরাধী ও যানবাহনের ছবি দ্রুত ধরা পড়ে। এছাড়াও প্রত্যেক পুলিশ বক্স্রের পাশে থাকবে অত্যাধুনিক ওই সিটি ক্যামেরা। এরমাধ্যমে ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অপরাধ প্রবণতা কমবে।