চুয়াডাঙ্গায় শীতের শুরুতে খেজুর গাছ কাটায় ব্যস্ত গাছিরা
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল। শীত আসতে আরো প্রায়ই দুই মাস বাকি। চুয়াডাঙ্গায় এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। রাতে নামছে কুয়াশাও। জেলার কৃষকদের মধ্যে এখন ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিতে। প্রতি বছরই শীতের আগমনে চুয়াডাঙ্গায় খেজুর গাছ কেটে সংগ্রহ করা হয় রস। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য এখন গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাটাকাটি চলছে। ক’দিন পরই গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। তাতে সংগ্রহ করা হবে রস। তা দিয়ে তৈরি হবে চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত খেজুরের গুড় ও পাটালি।চুয়াডাঙ্গার বেশিরভাগ গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে খেজুর গাছ। জমির আইলে আইলে খেজুর গাছ লাগিয়েছেন গ্রামের কৃষক। বিশেষ করে জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়া, সাতগাড়ি, বেলগাছি, সরোজগঞ্জ, মহাম্মদজমা, বোয়ালিয়া ও দামুড়হুদার জয়রামপুর, দোস্ত প্রভৃতি গ্রামে খেজুরের গাছ বেশি চোখে পড়ে। শীত মৌসুমে এসব গ্রামে খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজ চলে পুরোদমে। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।সদর উপজেলার সাতগাড়ি গ্রামের শাহীন আলীর খেজুর গাছ রয়েছে ১৭০টি। বোয়ালিয়া গ্রামের শুকুর আলীর আছে ১২০টি। একই গ্রামের রমজান আলীর গাছ রয়েছে ৮০টি। রস সংগ্রহের জন্য তারা এখন খেজুর গাছের আগা ঝোড়া, চাচ দেয়া ও নলি মারায় ব্যস্ত। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমের পুরো চারমাস তারা বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করে। ওইসময় তাদের প্রতিদিন আয় হয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা। তাদের মতে, গ্রামের গাছিরা সাধারণত কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। শীত মৌসুম এলে তারা খেজুর গাছ থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ পান।সাতগাড়ি, সরোজগঞ্জ ও মহাম্মদজমা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের প্রায় সব জমিতেই আছে একটি-দুটি এমনকি ১০-১২টি পর্যন্ত খেজুর গাছ। কোনো কোনো জমির চারপাশ খেজুর গাছ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। জমিতে চাষাবাদ আর খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ-এভাবেই চলছে অনেক কৃষকের সংসার। খেজুর গাছ অনেকের সচ্ছলতাও এনে দিয়েছে।কৃষকরা জানান, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের আগা কাটা হয়। আগা কাটা শ্রমিকও পাওয়া যায় গ্রামে। ২৫০ টাকা মজুরি নিয়ে তারা গাছ কাটেন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। শীত মৌসুমে গ্রামের কৃষকদের খেজুর গাছ কেটে দিব্বি সংসার চলে।বোয়ালিয়া গ্রামের মোহাম্মদ রানা জানান, ‘শীত মৌসুমে ঢাকাসহ সারা দেশের ব্যাপারীরা চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ ও জয়রামপুরের গুড়ের হাট আসেন। তারা এসব হাট থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি কিনে সারা দেশে সরবরাহ করেন। অনেকেই চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় ও পাটালি দেশের বাইরেও পাঠান।’ চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় ৩ লাখ খেজুর গাছ আছে। এ জেলার খেজুরের গুড়ের সুনাম দেশজুড়ে। শীতের মৌসুমে এ এলাকার চাষিরা খেজুর গাছ থেকে বাড়তি আয় করেন।