ফারাক্কার পানিতে ডুবছে ৪ জেলার নিম্নাঞ্চল

মানবজমিন প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত গত ১২ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে মহানন্দা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে- পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপরেস্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে জানান, পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল দশটায় বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে ১৬ সেন্টিমিটার। বর্তমানে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি। এদিকে, পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ঈশ্বরদী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামের নিমাঞ্চলের মানুষ। ডুবে গেছে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ফসল। গবাদি পশু নিয়ে পড়তে হয়েছে বিপাকে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু এলাকার স্বজনদের বাড়িতে। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, পানি বাড়লেও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা নেই। কিছুদিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। দৌলতপুরে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, দৌলতপুরে বন্যার চরম অবনতি হচ্ছে। রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হওয়ার পর এবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও স্লুইচ গেট ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে উপজেলার ফিলিপনগর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হতে থাকলে এলাকাবাসী বালির বস্তা দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তবে যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বালির বস্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এছাড়াও উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পদ্মার পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলকা প্লাবিত হয়েছে। ভুরকা এলাকায় স্লুইচ গেট ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে ভুরকা, বালিরদিয়াড়, মাজদিয়াড়, বৈরাগীরচর উত্তরপাড়া ও বৈরাগীরচরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে কৃষকের ফসল ও বাড়ি-ঘর। মরিচা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান, তার ইউনিয়নের ভুরকা এলাকায় স্লুইচ গেট ভেঙে পদ্মার পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে কৃষকের বিভিন্ন ধরনের ফসল ও বাড়ি-ঘর। ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল হক কবিরাজ জানান, ফিলিপনগর বড়মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা দিয়ে বাঁধ উপচে বন্যার পানি প্রবেশ করতে থাকলে বালির বস্তা দিয়ে এলাকাবাসী তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এদিকে, পদ্মার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে চিলমারী ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ১৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে সব মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে দুই ইউনিয়নের প্রায় সব মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও তাদের সেভাবে ত্রাণ সহায়তা বা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়নি। এদিকে পদ্মা নদীর পানি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় পানি বাড়ছে এক সেন্টিমিটার করে। গতকাল সকাল ১০টায় পানি পরিমাপ করার পর দেখা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, পদ্মা নদীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহের বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। গতকাল দুপুর ১২টায় পানি প্রবাহের মাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৬ সেন্টিমিটার। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুণ্ডু জানান, এই মুহূর্তে পানি বিপদসীমার দু’সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় কখনো ১ সেন্টিমিটার আবার কখনো ২-৩ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। আমরা প্রতিনিয়িত মনিটরিং করছি।হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধিভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়ায় পানি ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ সেন্টমিটার। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর উপজেলায় প্রায় ৪০টি গ্রাম ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে হঠাৎ বন্যায় ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে কুষ্টিয়ায়।ভারত সরকার হঠাৎ করেই ফারাক্কা বাঁধের সব লকগেট খুলে দেয় সোমবার। এতে মুর্শিদাবাদের একাংশ ও বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভেড়ামারা, দৌলতপুরসহ পদ্মা নদী বেষ্টিত অঞ্চল ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ভারত সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে প্রমত্তা পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। ৩০শে সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির লেবেল ছিল ১৪ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা শূন্য দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার পানি কম ছিল এ পয়েন্টে। কিন্তু ফারাক্কার সব ক’টি লকগেট খুলে দেওয়ার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ সেন্টিমিটার। গতকাল ১লা অক্টোবর দুপুর ৩টায় পানির লেভেল ছিল ১৪ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে ভেড়ামারা উপজেলার মসলেমপুর, সোলেমানিয়া, ঢাকাপাড়া, ইসলামপুর, কাজীপাড়া, রায়টা ফয়জুল্লাহপুর গ্রামসহ দৌলতপুর উপজেলার চিলমারি, রামকৃষ্ণপুর, ফিলিপনগর, মরিচা ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে, ভেড়ামারা শহররক্ষা বাঁধ ছাড়াও বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, ঘর-বাড়ি, গাছপালা, পান বরজ, উঠতি পাট, কলা বাগান এবং সবজি ক্ষেত। পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় গতকাল হুমকির মুখে থাকা এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল মারুফ। তিনি জানিয়েছেন, ভেড়ামারার মসলেমপুর গ্রামের প্রায় ১৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। রায়টা বাঁধ পানি ছুই ছুই করছে। যেকোনো সময় পানি ঢুকে পড়তে পারে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন হুমকির মুখে থাকা এলাকা এবং পানিবন্দি গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছেন।কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুণ্ডু জানিয়েছেন, ফারাক্কার সব কটি লকগেট খুলে দেয়ায় হঠাৎ করেই আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল দুপুর ৩টা পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির লেবেল ছিল ১৪ দশমিক ২৭ সেন্ট্রমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ সেন্টিমিটার। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। পানিবন্দি হয়ে যেতে পারে হাজার হাজার মানুষ। তবে এখনো আশঙ্কাজনক তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us