হলিউডের আবেদন সৃষ্টিকারী নায়িকা ডেমি মুর। এবার নিজেই তার জীবনের অন্ধকার অধ্যায় উন্মোচন করেছেন। বলেছেন, তার মা ভার্জিনিয়া কিং ছিলেন অ্যালকোহল আসক্ত। একজন পুরুষ তার সেই নেশার জন্য একবার ৫০০ ডলার হাতে ধরিয়ে দেয়। এরপর ডেমি মুর’কে ধর্ষণ করে সেই নরপিশাচ। তখন ডেমি মুরের বয়স মাত্র ১৬ বছর। ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি ওই নরপিশাচ। সে ডেমি মুরের কাছে জানতে চেয়েছে তার অনুভূতি কেমন ছিল। ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’য় দেয়া সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন এখন ৫৬ বছর বয়সী ডেমি মুর। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ।ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ডিয়ানে সয়ারের সঙ্গে নিজের নতুন বই ‘ইনসাইড আউট’ নিয়ে আলোচনা করছিলেন ডেমি মুর। এ সময় তিনি বলেন, তাকে বিভিন্ন বার-এ নিয়ে যেতেন তার মা ভার্জিনিয়া কিং। তার উদ্দেশ্য ছিল, পুরুষরা যেন তাদের দিকে মনোযোগী হয়। ওই বইয়ে একটি রাতের ঘটনা বর্ণনা করেছেন ডেমি মুর। তিনি বলেছেন, বয়স্ক একজন পুরুষকে নিয়ে তার মা এক রাতে বাসায় এলেন। বাসার চাবিটা ছিল ওই পুরুষের হাতে। সে তার মায়ের হাতে ৫০০ ডলার ধরিয়ে দিল। বিনিময়ে তার মা ভার্জিনিয়া কিং মেয়েকে ছেড়ে দিলেন। আর ওই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে। ডেমি মুর তার বইয়ে লিখেছেন, এটা ছিল ধর্ষণ। ভয়াবহ এক প্রতারণা। এ সময় উপস্থাপক ডিয়ানে সয়ার তার কাছে জানতে চান, তিনি কি মনে করেন তাকে দিয়ে তার মা যৌন ব্যবসার ফাঁদ পেতেছিলেন। জবাবে ডেমি মুর বলেন, গভীরভাবে আমি বিশ্বাস করি না, মা একাজ করেন নি। আমি মনে করি না এটা সরাসরি অর্থের বিনিময়ে ঘটেছিল। তবে মা ওই পুরুষকে সুযোগ দিয়েছিলেন, যাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ভার্জিনিয়া কিং মেয়ে ডেমি মুরকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন হলিউডে। সেখানেই ১৬ বছর বয়সে ডেমি মুর ধর্ষিত হন। এরপরেই বাড়ি ছেড়ে যান মুর এবং অভিনয়ের পেশা শুরু করেন। তিনি বলেছেন, তার পিতামাতা দু’জনেই ছিলেন অ্যালকোহল আসক্ত। তারা যখন ঋণের মুখে পড়েন তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেড়াতে থাকেন পরিবার নিয়ে। ডেমি মুরের বয়স যখন ১২ বছর, তখন তার মা প্রথম আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। একবার আত্মহত্যার জন্য তার মা ট্যাবলেট সেবন করছিলেন। এ সময় তার মুখ থেকে ডেমি মুর কেড়ে নেন সেই ট্যাবলেট। রক্ষা করেন মাকে। এ নিয়ে বইয়ে ডেমি মুর লিখেছেন, আমার মনে আছে মা একদিন ট্যাবলেট সেবন করছিলেন। তিনি গিলে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। তখন আমার ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল দিয়ে তার মুখের ভিতর থেকে সেগুলো বের করে আনি। ভার্জিনিয়া কিং পরে বিয়ে করেন ড্যান গাইনেস নামে এক ভদ্রলোককে। তারা দু’জনেই বড় করে তোলেন ডেমি মুরকে। এই ড্যান গাইনেসকেই ডেমি মুর তার প্রকৃত পিতা হিসেবে ভাবতেন। তবে ১৩ বছর বয়সে তিনি নিজের জন্মসনদ পান। তার পরেই জানতে পারেন গাইনেস তার প্রকৃত পিতা নন। ডেমি মুরের টিনেজ বয়সে তার মা ও গাইনেস খুব বেশিদিন একসঙ্গে থাকেন নি। তাই তিনি ও তার মা চলে যান হলিউডে। নিজের ভিতরকার দানবের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় এক পর্যায়ে কোকেন, ব্যথানাশকে আসক্ত হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করেন ডেমি মুর। তিনি স্বীকার করেছেন তার সাবেক স্বামী অ্যাশটন কুচার তাকে ‘থ্রিসাম’ যৌনতায় লিপ্ত হতে চাপ দিয়েছিলেন। তিনি ডেমি মুরের সঙ্গে দু’বার প্রতারণা করেছিলেন। উল্লেখ্য, ডেমি মুরের পুরো নাম ডেমি গিনি গাইনেস। তার জন্ম ১৯৬২ সালের ১১ই নভেম্বর। তিনি পেশাগত জীবনে ডেমি মুর হিসেবেই বেশি পরিচিত একজন মার্কিন অভিনেত্রী, গীতিকার, মডেল। ১৯৮১ সালে সিনেমা জগতে তার অভিষেক ঘটে। তাকে দেখা যায় ‘জেনারেল হসপিটাল’, ‘ব্লেম ইট অন রিও’, ‘সেইন্ট এলমোস ফায়ার’, ‘এবাউট লাস্ট নাইট’, ‘ঘোস্ট’ সহ প্রচুর ছবিতে। ‘ঘোস্ট’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন পান। ১৯৯৬ সালে তিনি সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অংকের অভিনেত্রী হন। ওই সময় তিনি ‘স্ট্রিপটিজ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য এক কোটি ২৫ লাখ ডলার পান।