ছবি সংগৃহীত

ভারত পুরাণ: দময়ন্তী ও নলের প্রেম উপাখ্যান (পর্ব-১)

দময়ন্তী যখন যুবতী, তখন তার রূপের প্রশংসা সারা ভারত বর্ষে ছড়িয়ে পড়লো। এমনকি দেবতারাও দময়ন্তীর রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়ে থাকলেন। অপর দিকে দময়ন্তীও নলের প্রশংসা শুনে মনে মনে তাকে ভালোবেসে ফেলে। দুইজন দুইজনকে না দেখেই শুধু পরস্পরের সম্পর্কে লোকমুখে শুনে গভীর প্রেমে পতিত হয়।

তানভীর আশিক
লেখক
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ০২:৫৬ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ০০:২৯
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ০২:৫৬ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ০০:২৯


ছবি সংগৃহীত
(প্রিয়.কম) বিদর্ভরাজ ভীমের কোন সন্তান হচ্ছিলো না। এই নিয়ে বিদর্ভরাজের মনে খুব দুঃখ ছিলো। একদিন তার কাছে এক ঋষি আসলেন। নাম দমন। ভীম ও তার স্ত্রী দমন ঋষিকে খুব সেবা যত্ন করলেন। ঋষি খুশি হয়ে বর দিলেন, ভীমের এমন রূপবতী এক কন্যা হবে, যাকে পাওয়ার জন্য দেবতারাও কামনা করবে। হলোও তাই। দময়ন্তী নামে এক কন্যা হলো। অপরূপ রূপবতী সে কন্যা। আর জন্ম নিলো তিন পুত্র দম, দন্ত ও দমন। যাইহোক, দময়ন্তী যখন যুবতী, তখন তার রূপের প্রশংসা সারা ভারত বর্ষে ছড়িয়ে পড়লো। এমনকি দেবতারাও দময়ন্তীর রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়ে থাকলেন।
নিষধরাজ বীরসেনের ছিলো গুণবান ও সুদর্শন এক পুত্র। নাম তার নল। তার বীরত্ব ও সৌন্দর্যের প্রশংসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লোকমুখে দময়ন্তীর রূপ ও গুণের কথা শুনে নল তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলে। আবার অপর দিকে দময়ন্তীও নলের প্রশংসা শুনে মনে মনে তাকে ভালোবেসে ফেলে। দুইজন দুইজনকে না দেখেই শুধু পরস্পরের সম্পর্কে লোকমুখে শুনে গভীর প্রেমে পতিত হয়। একদিন উদ্যানে নল এক সোনা রঙের রাজহাঁস দেখতে পেয়ে তাকে বন্দী করে। হাঁস মুক্তি পাওয়ার জন্য বলে যে, তাকে যদি ছেড়ে দেয়া হয় তবে সে দময়ন্তীর কাছে গিয়ে নলের মনের কথা খুলে বলবে। নল তাতে রাজী হয়। সে হাঁসটিকে ছেড়ে দেয়। হাঁস দময়ন্তীর কাছে গিয়ে নলের মনের কথা সমস্তই খুলে বলে। দময়ন্তী সব শুনে নিজের মনের কথাও হাঁসকে বলে দেয়। এ ভাবে হাঁসকে দূত করে তাদের প্রেম চলতে থাকে। এর কিছুদিন পর, বিদর্ভরাজ দময়ন্তীর বিবাহের জন্য এক বিরাট স্বয়ংবর সভার আয়োজন করেন। বিভিন্ন দেশের রাজা ও রাজকুমারগণ সেই সভায় উপস্থিত হন। শুধু কি তাই? দেবরাজ ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতারাও দময়ন্তীর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে স্বয়ংবর সভায় উপস্থিত হন। নলও এই সভায় যোগদানের জন্য রওনা দেন। পথে নলের সাথে ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ ও যমের সাক্ষাৎ হয়। দেবতারা নলের সৌন্দর্য দেখে ভাবেন, এ থাকলে তাঁদেরকে দময়ন্তী পাত্তাই দিবে না। তাই দেবতারা যুক্তি করে নলকে তাঁদের দূত হতে অনুরোধ করেন। কিন্তু নল প্রথমে তা করতে অস্বীকার করে। বলে, যেহেতু আমি নিজেই স্বয়ংবর প্রার্থী, আমা দ্বারা এই কাজ করা অনুচিত। কিন্তু দেবতারা তাকে বাধ্য করে দূত হতে। দেবতাদের বরে অদৃশ্য হয়ে নল দময়ন্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেবতাদের মনের কথা খুলে বলেন। কিন্তু দময়ন্তী দেবতাদের প্রত্যাখ্যান করে নলকেই স্বামী হিসাবে পাওয়ার কথা জানান।
নল এসে প্রকৃত ঘটনাই দেবতাদের জানান। দেবতারা বিষয়টি জেনে স্বয়ংবরা সভায় তাঁরাও নলের রূপ ধরে আসন গ্রহণ করেন। দময়ন্তী স্বয়ংবর-সভায় উপস্থিত হয়ে দেখেন পাঁচজন সুদর্শন নল। এখন কার গলায় মালা দিবে সে? দময়ন্তী ভাবনায় পড়ে যায়। শেষে তার মনে হয় এদের মাঝে চারজন নিশ্চয়ই দেবতা। দেবতাদের থাকে স্থির দৃষ্টি আর তাঁদের শরীরে কখনো ঘাম জমে না। এইসব বিবেচনা করে দময়ন্তী শেষ পর্যন্ত নলের গলায়ই মালা পরায়। নলের সততা আর দময়ন্তীর বিচক্ষণতায় দেবতারা খুশি হন। চারদেবতা নলকে চারটি বর প্রদান করেন। ইন্দ্রের বর : যজ্ঞকালে নল ইন্দ্রকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। অগ্নির বর : নল ইচ্ছা করলেই তিনি আবির্ভূত হবেন। বরুণের বর : প্রার্থনা মাত্র জল প্রদান করবেন। যমের বর : নলের তৈরিকৃত যে কোন খাদ্য সুস্বাদু হবে। যাইহোক, শেষে মহা ধুমধামে নল আর দময়ন্তীর বিয়ে হয়।

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...