ছবি : সংগৃহীত

নারীদের হায়েজ ও নেফাস কী এবং কেন এমনটা হয়?

হায়েজ ও নেফাসের সময় স্ত্রী সহবাস হারাম। এ ছাড়া একসাথে খানাপিনা করা, এক বিছানায় শুয়ে থাকা ইত্যাদি জায়েজ আছে।

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৭, ১৩:২২ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ২১:৩৩
প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৭, ১৩:২২ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ২১:৩৩


ছবি : সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) হায়েজ কাকে বলে : বালিগ হওয়ার পর স্বভাবগতভবে নারীদের জরায়ু থেকে বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণ ব্যতিরেকে স্বাভাবিক নিয়মে যে রক্ত নির্গত হয়, একে ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় হায়েজ বলে। [শরহে বেকায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০৮]

হায়েজ কখন হয় এবং কতদিন : হায়েজ হওয়ার বয়স কমপক্ষে নয় বছর। নয় বছরের আগে যদি কোনো বালিকার রক্তস্রাব হয় তাহলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে না। সাধারণত পঞ্চান্ন বছর পর্যন্ত নারীদের হায়েজ হয়ে থাকে। পঞ্চান্ন বছরের পর রক্তস্রাব হলে একে হায়েজ বলে গণ্য করা হবে না। তবে এ বয়সে রক্তের রং যদি গাঢ় লাল হয় অথবা কালচে কাল হয় তাহলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৬]

হায়েজের মেয়াদ বা সময়কাল কমপক্ষে তিন দিন তিন রাত এবং ঊর্ধ্বে দশ দিন দশ রাত। তিন দিন তিন রাতের কম রক্তস্রাব হলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে না। তেমনি দশ দিন দশ রাতের বেশী রক্তস্রাব হলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে না। একে বলা হবে ‘ইস্তিহাজা’ বলা হয়। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৬] যা সাধারণত কোনো না কোনো রোগের কারণে হয়ে থাকে। এর হুকুম হায়েজের হুকুম থেকে ভিন্নতর। [হিদায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬২-৬৩] হায়েজের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে একেবারে সাদা রঙ ব্যতীত যে রঙের রক্তই আসবে- তা লাল, হলুদ, সবুজ, কালো, ধূসর যা-ই হোক না কেন সবই হায়েজ বলে গণ্য হবে। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৬]

হায়েজের মাসআলা-মাসায়েল : যদি কোনো মেয়ের তিন-চারদিন রক্ত আসার অভ্যাস থাকে, তারপর কোনো মাসে তার অধিক দিন অব্যাহত থাকে- তাহলে তা হায়েজ বলেই গণ্য হবে। যদি দশ দিনের বেশী সময় রক্ত আসে তাহলে যতদিনের অভ্যাস ছিল ততদিন হায়েজ বলে গণ্য করা হবে এবং বাকী অংশ ‘ইস্তিহাজা’ বিবেচিত হবে।[ফতহুল কাদির, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫৭-১৫৮] দুই হায়েজের মধ্যে পবিত্র অবস্থার সময়কাল কমপক্ষে পনের দিন। এর বেশীর কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই।[হিদায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৬]

কোন নারীর হায়েজের সময়কালের কম সময় অর্থাৎ দু’একদিন রক্ত আসার পর পনের দিন সে পবিত্র থাকলো। তারপর আবার দু’একদিন রক্ত এলো। এই পনের দিন সে পবিত্র থাকবেই। তারপর যে রক্ত আসবে সেটা হবে ‘ইস্তিহাজা’ বলে গণ্য হবে।

যদি কোনো নারীর অভ্যাস অনির্দিষ্ট থাকে- কখনো চার দিন, কখনো সাত দিন, কখনো দশ দিন রক্তস্রাব হয় তাহলে এসব হায়েজ বলে গণ্য হবে। তার যদি দশ দিনের বেশী রক্ত আসে, তাহলে দেখতে হবে গত মাসে কত দিন এসেছিল, ততদিন হায়েজ ধরা হবে আর বাকীদিনগুলো ইস্তিহাজা হিসেবে বিবেচিত হবে। [শরহে বেকায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১০-১১২]

নিফাস কাকে বলে : সন্তান প্রসবের পর স্ত্রীলোকের জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় ‘নেফাস’ বলা হয়। [হিদায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৯]

নিফাসের সময়কাল বা মেয়াদ : নিফাসের সময়কাল উর্ধ্বে চল্লিশ দিন। আর কমের নির্দিষ্ট সীমা নেই। সন্তান প্রসবের পর যদি কোনো স্ত্রীলোকের রক্তস্রাব না হয় তবুও তার গোসল কারা ওয়াজিব। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭] গর্ভপাত হওয়া অবস্থায় সন্তানের অঙ্গ গঠন হয়ে থাকলে, যে রক্তস্রাব আসে তা নিফাসের রক্ত বলে গণ্য হবে। চল্লিশ দিনের বেশী রক্তস্রাব হলে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে চল্লিশ দিন নিফাসের সময় গণ্য হবে এবং বাকীদিনগুলো ইস্তিহাজা হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যদি প্রথম সন্তান না হয় এবং নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে তাহলে তার অভ্যাসের দিনগুলো নিফাসের দিন হিসেবে ধরা হবে। বাকী দিনগুলো ইস্তিহাজার। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭]

হায়েজ ও নেফাসের সময় নারীরা কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না : হায়েজ ও নেফাসের দিনগুলোতে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। তার কাজাও আদায় করতে হবে না। হায়েজের সময় মুস্তাহাব হলো নামাজের সময় হলে অজু করে নামাজ আদায় করার স্থানে বসে থাকবে। সাধারণত নামাজ আদায় করতে যে সময় লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত বসে বসে ‘সুব্হানাল্লাহ্’ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়তে থাকবে।

এমনিভাবে হায়েজের দিনগুলোতে রোজা নিষিদ্ধ। অবশ্য পরে রোজা কাজা করতে হবে। নফল রোজা রাখা অবস্থায়ও হায়েজ শুরু হলে পরে এর কাজা করা জরুরী।

হায়েজ ও নেফাসের সময় মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ। হায়েজ ও নেফাসের সময় কাবা ঘরের তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। কুরআন তিলাওয়াত করাও নিষিদ্ধ। তবে শুকরিয়া আদায় করতে গিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বা খানা খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ্‌’ পড়াতে কোনো দোষ নেই।  হায়েজ ও নেফাসের সময় কুরআন স্পর্শ করাও জায়িজ নয়। অবশ্য জুঝদান অথবা রুমালের সাহায্যে কুরআন স্পর্শ করা যায়। পরিধানের কাপড় দিয়ে বা কুরআনের সাথে সেলাই করা কাপড় দিয়ে স্পর্শ করাও জায়িজ নয়। কোনো বস্তু বা স্থানে কুরআনের পূর্ণ এক আয়াত লিখা থাকলে তাও স্পর্শ করা জায়িজ নয়। তবে হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় কুরআন দেখা নিষিদ্ধ নয়।

হায়েজ ও নেফাসের সময় স্ত্রী সহবাস হারাম। এ ছাড়া একসাথে খানাপিনা করা, এক বিছানায় শুয়ে থাকা ইত্যাদি জায়িজ আছে। হায়েজ ও নিফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে গোসল করা ওয়াজিব।

প্রিয় ইসলাম/শামীমা সীমা

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...