আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু গুরমিত সিংহ রাম রহিম। ফাইল ছবি

আন্ডারগ্রাউন্ড ধর্ষণ চেম্বার ‘বাবা কি গুফা’

আঙুলের ছাপ, চোখের মণি-র মতো বায়োমেট্রিক তথ্য পাওয়ার পরই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মেলে। ধর্মগুরু হলেও রাম রহিমের পছন্দ শিফনের রঙবেরঙের জামা, বাহারি জুতো। তার জামাকাপড় তৈরির জন্য নিজস্ব ফ্যাশন ডিজাইনার রয়েছেন।

আশরাফ ইসলাম
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৩:১১ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৮:০০
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৩:১১ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৮:০০


আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু গুরমিত সিংহ রাম রহিম। ফাইল ছবি

(প্রিয়.কম) আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু গুরমিত সিংহ রাম রহিমের ধর্ষণ চেম্বার। এর নাম ‘বাবা কি গুফা’ (বাবার গুহা)। বিলাসবহুল আসবাব, রঙ-বেরঙের পর্দায় সাজানো সেই প্রাসাদেই গুরমিত সিংহ রাম রহিম বসবাস করেন। গুফায় তাকে ঘিরে থাকেন ২০০ জনেরও বেশি বাছাই করা শিষ্য। তাদের চুল খোলা। পরনে সাদা রঙের পোশাক। এরাই রাম রহিমের দেখাশোনা করেন। এমনই দুই শিষ্যকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বাবা রাম রহিম। 

যে দুই নারী রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন, ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিচারকদের সামনে তাদের জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ধর্ষণের প্রায় ১০ বছর পর রাম রহিমের দুই সেবিকার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয় ২০০৯ ও ২০১০ সালে।

মূলত এ দু’জনের নির্যাতিত হওয়ার বয়ান রেকর্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে বিতর্কিত ধর্মগুরুর সাজার ভাগ্য নির্ধারিত হয়।  

জানা গেছে, বাবা কি গুফায় সবাই যেতে পারেন না। প্রবেশাধিকার আছে মাত্র কয়েক জনের। তাও আঙুলের ছাপ, চোখের মণি-র মতো বায়োমেট্রিক তথ্য পাওয়ার পরই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মেলে। ধর্মগুরু হলেও রাম রহিমের পছন্দ শিফনের রঙবেরঙের জামা, বাহারি জুতো। তার জামাকাপড় তৈরির জন্য নিজস্ব ফ্যাশন ডিজাইনার রয়েছেন। 

ধর্ষণের শিকার দুই নারী অভিযোগ করেন, রাম রহিম যখন ধর্ষণ করতেন, তখন তিনি নিজেকে দেবতা বলে দাবি করতেন এবং দেবতার মর্যাদায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন। এছাড়া রাম রহিমের ধর্ষণকাণ্ডকে তার ভক্তরা ‘মাফি’ (ক্ষমা) বলে অভিহিত করতেন। নিজের গোপন ডেরায় আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে নারীদের সম্মোহিত করার চেষ্টা করতেন রাম রহিম।

আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু গুরমিত সিংহ রাম রহিম। ছবি: সংগৃহীত

রাম রহিমের কনভয়ে বিলাসবহুল ১০০টি গাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি কালো রঙের ফোর্ড এনডেভার। বাবা নিজেই ঠিক করেন, তিনি কোন গাড়িতে উঠবেন। আশ্রমে নিজের ব্যাটারিচালিত গাড়িতেই ঘোরেন তিনি।

সিরসায় ডেরা সচ্চা সৌদার এই সদর দফতরকে আসলে আশ্রম না বলে ছোটখাটো শহর বলা যায়। গুফার ভিতরেই চাল, ডালের চাষ হয়। হোটেল, সিনেমা হল, স্কুল, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, স্টুডিও, বায়ো-গ্যাস কারখানা, পেট্রোল পাম্প, সংবাদপত্রের ছাপাখানা- সবই রয়েছে। এক সঙ্গে ১০ হাজার জামাকাপড় কাচার ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াশিং মেশিনও রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে কন্ট্রোল রুম।

গুরমিত সিংহ রাম রহিমের এক পুত্র ও দুই কন্যাও রয়েছে। এছাড়া আরও একটি কন্যা দত্তক নিয়েছেন তিনি। তার স্ত্রীর নাম হরজিত কউর। মেয়েরা তার সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। ছেলে জসমিতের বিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা হরমেন্দ্র সিংহ জস্‌সির কন্যার সঙ্গে। বড় মেয়ে চরণপ্রীতের দুই ছেলেও রয়েছে।  

এর আগে, ২৫ আগস্ট শুক্রবার হরিয়ানার পঞ্চকুলার একটি আদালতে স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিমের ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। আদালত ধর্মগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করার পর থেকে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবজুড়ে এ পর্যন্ত ৩২ জনের প্রাণহানি ও দুই শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডেও।

এই ধর্মগুরুর শাস্তি ঘোষণা হবে আগামী ২৮ আগস্ট সোমবার। কিন্তু তার আগেই শুরু হয়েছে ভক্তদের তান্ডব।

২৬ আগস্ট শনিবার সকাল থেকে হরিয়ানার পাঁচকুলা ও এর আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সহিংসতা এড়াতে বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় কারফিঊ ও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রোহতকের অনেক ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে। শনিবার উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ ও বাঘপাতে সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন: 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...