তিনি টুইটারে এমন এক মন্তব্য করেন যাতে বিজ্ঞানীরা স্তম্ভিত হয়ে যান। ছবি: IFLScience

গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে এ কেমন অদ্ভুত মন্তব্য করলেন ট্রাম্প?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি টুইটারে এতই অদ্ভুত একটি কথা বলেন, যাতে বাকরুদ্ধ হয়ে যান বিজ্ঞানীরা!

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:২৩ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:৪৮
প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:২৩ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:৪৮


তিনি টুইটারে এমন এক মন্তব্য করেন যাতে বিজ্ঞানীরা স্তম্ভিত হয়ে যান। ছবি: IFLScience

(প্রিয়.কম) বিভিন্ন কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে বিতর্কের অন্ত নেই। বছর শেষের সময়টায় অনেকেই আশা করেছিলেন তিনি নতুন কোনো বিতর্কের জন্ম দেবেন না। কিন্তু নিউ ইয়ার ইভকে সামনে রেখে তিনি টুইটারে এমন এক মন্তব্য করেন যাতে বিজ্ঞানীরা স্তম্ভিত হয়ে যান। 

তার এই মন্তব্যের মূল উদ্দেশ্য সম্ভবত ছিল প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টকে খোঁচা দেওয়া। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাতে চেষ্টা করছে, কিন্তু আমেরিকায় তো রীতিমত ঠাণ্ডা পড়ে গেছে। তাই প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টে অংশ না নিয়েই তিনি ভালো করেছেন। আর যেসব দেশগুলো প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টের অংশ হিসেবে যেসব দেশ গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমানোর চেষ্টা করছে তাদেরকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করছেন তিনি। 

আপনার যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে কিছুটা ধারণা থাকে, তাহলেও আপনি বুঝতে পারবেন কতটা অবৈজ্ঞানিক তার এই উক্তি। প্রথমত, আমেরিকার আবহাওয়া ঠাণ্ডা বটে, কিন্তু শীতকালে ঠাণ্ডা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই বছর ঠান্ডাটা একটু বেশী পড়েছে। তার কারণ হলো আর্কটিক সাগরের ওপরে একটি বায়ু প্রবাহ সম্প্রতি পরিবর্তিত হয়ে কানাডা এবং আমেরিকার ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহিত করছে। এটা আরো বেশ কয়েকদিন থাকতে পারে, ফলে হিমাংকের নিচে থাকবে তাপমাত্রা। কিন্তু আমেরিকায় ঠাণ্ডা পড়েছে তারমানে এই নয় যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ভিত্তিহীন! এটা আবহাওয়ার সাময়ীক একটি অবস্থা। এর সাথে সার্বিক জলবায়ুর সংযোগ দেখতে গেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতই ভুল করে ফেলবেন আপনি। 

অনেকেই জানান না আবহাওয়া এবং জলবায়ুর মাঝে পার্থক্যটা কী। আবহাওয়া হলো পরিবেশের দৈনিক অবস্থা। আজকের আবহাওয়া বলতে বোঝায় কোন একটি জায়গার পরিবেশ কি আজকে ঠাণ্ডা না গরম, ভেজা না শুষ্ক, শান্ত নাকি ঝড়ো? জলবায়ু আবার আলাদা। বড় সময় ধরে (এক বছর, দশ বছর বা একশ বছর) একটি এলাকার আবহাওয়ার গড়কেই বলা হয় জলবায়ু। এ কারণে একদিন ঠাণ্ডা পরলেই আপনি ধরে নেবেন জলবায়ু উত্তপ্ত হয়ে উঠছে না- তা হবে না। 

ভুলে যাবেন না, কিছুদিনে আগেই ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় পৃথিবী আসলেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রায় পুরোটাই মানব সভ্যতার দোষ।  আমেরিকার শীতকালটাও সময়ের সাথে সাথে কম ঠাণ্ডা হয়ে উঠছে, দেখা যায় বিজ্ঞানীদের তথ্য থেকে। বর্তমানে যে বায়ুপ্রবাহের কারণে কানাডা এবং আমেরিকা ঠাণ্ডা হয়ে আছে, তার কারণ হলো আর্কটিক এবং আলাস্কা অস্বাভাবিক উত্তপ্ত। এ কারণেই বায়ু এদিকে ঠাণ্ডা হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

আপনিও যদি মনে করেন ক্লাইমেট চেঞ্জ আসলে ভুয়া, বানোয়াট কারণ আমেরিকায় বেশী বেশী ঠাণ্ডা পড়ছে, জেনে রাখুন গত ৩৬৫ দিনে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার তুলনায় গরম আবহাওয়া ছিল ৩ গুণ বেশী। 

এতগুলো কথার সারমর্ম আসলে এটাই, যে এক সপ্তাহের জন্য ঠাণ্ডা পড়ছে তার মানে এই নয় যে ক্লাইমেট চেঞ্জ মিথ্যা। বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়া পরিবর্তনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বের করেছেন ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে ভয়াবহ আকারে। দুই-একদিনের ঠাণ্ডা আবহাওয়া কোন কিছুই প্রমাণ করে না। 

এতেও যদি আপনি না বোঝেন, তাহলে চলুন একটি উদাহরণ দিই। আপনার বাড়িতে আগুন লেগে গেছে। কিন্তু আপনি আছেন বাড়ির ছোট একটা এসি রুমে। আপনার ঠাণ্ডা লাগছে। কিন্তু তারমানে এই নয় যে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন আপনার বাড়িতে আগুন লেগেছে!

সূত্র: IFLScience

প্রিয় লাওফ/ আর বি 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...