কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে সঠিক খাদ্য উপাদান। ছবি: প্রিয়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই সঠিক খাদ্য: পুষ্টিবিদ নাজরিন

ইতিমধ্যে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে নিউট্রিশনিষ্ট এবং নিউট্রিশনিষ্ট এক্সপার্ট অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন । বর্তমানে নিজের চাকরি ছাড়াও ‘নিউট্রিশনিষ্ট নাজরিন সুলতানা’ নামে একটি পেইজে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:০৫ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১০:৪৮
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:০৫ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১০:৪৮


কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে সঠিক খাদ্য উপাদান। ছবি: প্রিয়।

(প্রিয়.কম) একদম ছোটবেলা থেকেই প্রবল ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে এমন কোন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করবেন এবং কাজ করবেন, যার সাথে প্রতিদিনের জীবন-যাপন জড়িত। কিন্তু তখনো সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেন নি যে কোন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করলে জীবনচর্চার মান উন্নয়ন ও রক্ষার্থে কাজ করতে পারবেন তিনি। এরপর সময় যায়। ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন সময়ে নিজের প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাস এবং সুস্বাস্থ্য নিয়ে খুব সচেতন হয়ে ওঠেন তিনি নিজেই।

তখন থেকেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়ালেখা করবেন স্বাস্থ্য ও খাদ্য সম্পর্কিত বিষয়ে। শুধুমাত্র নিজের স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্যেই নয়, পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার দিকেও ছিল তাঁর সমান আগ্রহ। তেমনভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন এবং সফলভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফুড এন্ড নিউট্রিশন’ বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। শুরু হয় তার কাঙ্ক্ষিত ও পরিকল্পিত বিষয় নিয়ে পড়ালেখা।

যার কথা বলা হচ্ছিল তিনি নিউট্রিশনিষ্ট নাজরিন সুলতানা ইরিন । পড়ালেখা শেষ করার পরেও তাঁর মাথায় ছিল নিজের পড়ালেখার বিষয় নিয়েই কর্মক্ষেত্রে পদার্পণ করা। যার ফলাফল স্বরূপ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বিগত তিন বছর যাবত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে নিউট্রিশন অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।

ইতিমধ্যে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে নিউট্রিশনিষ্ট এবং নিউট্রিশনিষ্ট এক্সপার্ট অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন । বর্তমানে নিজের চাকরি ছাড়াও ‘নিউট্রিশনিষ্ট নাজরিন সুলতানা’ নামে একটি পেইজে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে সময় দেবার পর স্বাভাবিকভাবেই নিজের চেম্বারে সময় দেবার মতো ফুসরত পান না। যে কারণে সহজলভ্য এই মাধ্যম দ্বারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেকের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সেবা দিয়ে থাকেন তিনি।

পুষ্টিবিদ নাজরিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বর্তমান সময়ে প্রকট আকারে দেখা দেওয়া উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল সমস্যা নিয়ে। তিনি জানান, স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিটি মানুষের শরীরের কোষে কোলেস্টেরল থাকে। একইসাথে এই কোলেস্টেরল আমরা খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেও গ্রহণ করে থাকি। কোলেস্টেরল হরমোন তৈরিতে এবং ভিটামিন-ডি জেনারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে তবে শরীরে সমস্যা তখনই ঘটে যখন এই কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশী বেড়ে যায়।

নাজরিন আরো জানান, মানুষের শরীরে মূলত দুইটি ভিন্ন ধরণের কোলেস্টেরল থাকে। LDL (Low-density lipoprotein) বা খারাপ কোলেস্টেরল এবং HDL (High- density lipoprotein) বা ভালো কোলেস্টেরল। বিভিন্ন কারনেই একজন মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে। যেমন: অতিরিক্ত ওজন, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ফাস্ট ফুড, এক্সারসাইজ না করা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, জেনেটিক্স ইত্যাদি। ফলে নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমেই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব। 

পুষ্টিবিদ নাজরিন সুলতানা কিছু স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদানের নাম জানান, যে সকল খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ বাড়তি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে। পাঠকের জন্য তালিকাটি তুলে ধরলাম আমরা।

. ওটস:

ওটসে থাকা দ্রবীভূত আঁশ (soluble fiber) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে সুতরাং সকালের নাস্তায় ওটস হতে পারে খুবই ভাল খাদ্য। চাইলে এর সাথে কলা এবং স্ট্রবেরীও অ্যাড করতে পারেন। ওটস ওজন কমাতেও সাহায্য করে।   

২. সিমের বীজ বা বীজ জাতীয় খাবার:

এরাও দ্রবীভূত আঁশের ভাল উৎস এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যে কোন খরনের সিমের বীজ, কিডনী বিন, ডাল, মটরশুঁটি খাওয়া যেতে পারে।  

৩. ঢেঁড়স ও বেগুন:

এই সবজি দুটোর ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং দুটোতেই দ্রবীভূত আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় এরা কোলেস্টেরল কমায়।

৪. বাদাম:

বিভিন্ন স্টাডি রিপোর্টে  দেখা গিয়েছে যে প্রতিদিন ২ আউন্স করে বাদাম খেলে LDL তথা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ৫% কমে সুতরাং বিকালের নাস্তায় আখরোট, কাজুবাদাম, বিনাবাদাম, কাঠবাদাম খেতে পারেন  

৫. আপেল, আঙ্গুর, স্ট্রবেরী ও অন্যান্য টক জাতীয় ফল:

এই ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পেক্টিন নামক দ্রবীভূত আঁশ থাকে, যা LDL এর পরিমাণ কমায়।

৬. সয়া:

সয়াবিন ও সয়াফুড যেমন: টফু, সয়ামিল্ক কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে বিভিন্ন স্টাডিতে দেখা গিয়েছে যে কেউ যদি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে সয়া প্রোটিন গ্রহণ করেন, তবে তার LDL লেভেল ৫% - ৬% কমে যায়।

৭. ফ্যাটি মাছ/ মাছের তেল:

মাছের তেল এ থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, যা ক্ষতিকর Triglyceride কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং মাংসের পরিবর্তে মাছ খাওয়া হতে পারে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আদর্শ।

৮. উদ্ভিজ তেল:

মাখন, ঘি এর পরিবর্তে সূর্যমুখীর তেল, ক্যানোলা অয়েল রান্নায় ব্যাবহার করা ভাল LDL লেভেল কমানোর জন্য।  

সবশেষে নাজরিন জানিয়েছেন, শুধু সঠিক খাদ্য উপাদান গ্রহণ করাই যথেষ্ট নয়। সঠিক খাবা সঠিক সময়ে গ্রহণ করাও সমানভাবে জরুরি। একইসাথে নিয়মিত শরীরচর্চা করার অভ্যাস গড়ে তুললেও কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ও ধারাটি বজায় থাকবে।

প্রিয় লাইফ/ রুমানা বৈশাখী 

 

 

 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...