মিরপুর ইনডোরে মোহাম্মদ রফিক (বামে)। ছবি: সংগৃহীত

‘সাকিব আল্লাহর দান’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়, সাকিব-তামিমের পারফরম্যান্সসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে প্রিয়.কমের সাথে কথা বললেন রফিক।

শান্ত মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১৯:১৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০১:০০
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১৯:১৪ আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০১:০০


মিরপুর ইনডোরে মোহাম্মদ রফিক (বামে)। ছবি: সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) ৫০তম টেস্ট ম্যাচ ছিল। এ নিয়ে অবশ্য বালাই ছিল না সাকিব আল হাসানের। আর দশটা ম্যাচের মতো করেই নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ম্যাচটি। তবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে দেখা গেছে জাদুকরের ভূমিকায়। প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করার পর বল হাতে তুলে নেন পাঁচ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে পাঁচ রান করা সাকিবের শিকার আবারো পাঁচ উইকেট। 

মূলত তার কাছেই হেরেছে অজিরা। এমন সাকিবকে দেখে রোমাঞ্চিত বাংলাদেশের সাবেক স্পিনার মোহাম্মদ রফিক। বাংলাদেশ প্রাণভোমরাকে আল্লাহর দান বলছেন সাবেক বাঁ-হাতি এই স্পিনার। জানালেন, ট্যালেন্ট আল্লাহ দান করেন। বানিয়ে নেয়া যায় না এটা।

২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন রফিক। ওটাই ছিল বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সেরা সাফল্য। ১১ বছর পর এসে অগ্রজের দেখানো পথে হেঁটেছেন সাকিব। রফিকের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে অজিদের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়, সাকিব-তামিমের পারফরম্যান্সসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে প্রিয়.কমের সাথে কথা বললেন রফিক। প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো-  

- অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে এই জয়টা কিভাবে দেখছেন?

মোহাম্মদ রফিক: আমি বলবো এটা সাকিব আর তামিমের পুরোপুরি অবদান। প্রথম ইনিংসে সাকিব আর তামিম যদি ওই ব্যাটিং না করতে পারত তাহলে ম্যাচ সাড়ে তিন নয়, আড়াই দিনেই শেষ হতে পারত। তারা দুই ইনিংসেই ভাল করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম এই ব্যাটিং না করলে ম্যাচ তিন দিনে নিতে পারতাম না আমরা। জিততে পারতাম না। তবে জিতেছি ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের ভুল আছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি জিততে আমাদের সেইসব ভুল শুধরাতে হবে। এটা অস্ট্রেলিয়া দল, এরা খুব গোছানো ক্রিকেট খেলে। 

- এই বাংলাদেশের সামর্থ্য নিয়ে বলতে বললে কী বলবেন?

মোহাম্মদ রফিক: বাংলাদেশ যে সারা ক্রিকেট দুনিয়ায় নাড়া দিচ্ছে এটা তার প্রমাণ। অস্ট্রেলিয়া দলকেও টেস্টে বাংলাদেশ হারিয়ে দেয় এবং খেলা সাড়ে তিন দিনে শেষ হয়। এটা কিন্তু সহজ কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়ার এই হার অনেকেই মানতে চাইবে না। এখানে উইকেট কী আছে না আছে সেটা কিন্তু দুনিয়া দেখবে না। দুনিয়া দেখবে কে হারল, কে জিতল। ইতিহাস থাকবে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেট দেখবে না কিন্তু কেউ। 

- বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল। একটা ভাল মোমেন্টামের মধ্য দিয়ে যাবে দল। সিরিজ জয়ের ব্যাপারে কতোটা আশাবাদী?

মোহাম্মদ রফিক: ইন শা আল্লাহ। যে কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। তো বাংলাদেশ সেই ম্যাচ জিতে গেছে। বাংলাদেশ কিন্তু ওদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেল। বৃষ্টি বা কোনো কারণে ওখানে যদি খেলা না হয় তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ সিরিজ জিতে গেল। তবে আমরা খেলেই জিততে চাই। এরজন্য নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ ওখানকার উইকেট আলাদা হবে। এখানকার উইকেটে হাঁটুর নিচে বল পেয়েছেন, চট্টগ্রামে বুকের উপরে থাকবে। ওখানে কিন্তু রান হয়। তো এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এর সাথে ব্যাটসম্যানদের আরো দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে।

- বারবার বলছেন সমস্যা আছে, সেটা দূর করতে হবে। সেগুলো কী আসলে?

মোহাম্মদ রফিক: আপনি প্রথম ইনিংসের আউটগুলো দেখেন। টেস্ট ক্রিকেটে এই ধরনের আউট হওয়া মানে কিন্তু আত্মহত্যা করা। দ্বিতীয় ইনিংসটাও দেখেন। তামিম যদি এই ইনিংসটা না খেলতে পারত তাহলে কি অবস্থা হতো। ব্যাটসম্যানদের আরো সাবলীল ব্যাটিং করতে হবে। টেস্টের মেজাজে ব্যাটিং করতে হবে। সাড়ে তিনদিনে দুই দলের ৪০টা উইকেট পড়া কিন্তু কম কথা নয়। এমন কিন্তু খুব কম হয়।

- আপনার পর বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাকিব আল হাসান পাঁচ উইকেট নিলেন। আবার ব্যাট হাতেও দলকে পথ দেখিয়েছেন। এই ম্যাচে সাকিবকে কেমন দেখলেন?

মোহাম্মদ রফিক: সাকিব যখন দলে আসে আমি বলেছি এবং এখনো বলছি, সাকিব ওর নিজের গড়া ইতিহাস নিজেই ভাঙতে থাকবে। ও যে পর্যন্ত সুস্থ থাকবে, আল্লাহ ওকে আরো অনেক বছর খেলার তৌফিক দান করুক। ওদের জন্যই কিন্তু বাংলাদের এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, ওদের ওপর আরো অনেক দায়িত্ব আছে। আমি সাকিবকে খুব কাছে থেকে দেখেছি, বলা যায় নিজের হাতে গড়েছি। আমি জানি নিজের ওপর ওর বিশ্বাস আছে। এই ব্যাপারটা সব ক্রিকেটারের মধ্যে থাকা দরকার।

- বর্তমান বাংলাদেশ দলের স্পিন আক্রমণ সেরা কি না- এমন প্রশ্নে সাকিব আপনার নাম বলেছেন। তিনি আপনাকে আইডল মানেন। বিশ্বসেরা একজন অলরাউন্ডার বা অনুজদের কাছ থেকে পাওয়া এমন মন্তব্য কতোটা তৃপ্তির?

মোহাম্মদ রফিক: এটা অবশ্যই অনেক তৃপ্তির। অনেক ভালো লাগে এমন মন্তব্য শুনলে। ও যে আমার নাম বলেছে এটা বড় ব্যাপার। ও আমার সাথে কম খেলেছে। যখন একসাথে খেলতাম, আমি বলতাম যে আয় দেখি কে ভাল করে। বড় ভাই হিসেবে ও আমাকে খুব শ্রদ্ধা করে। আমরা যখন খেলি তখন সাকিব দলে নতুন। আর নতুনদের সিনিয়র ক্রিকেটাররা সাহায্য করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের শুরুর সময় কিন্তু এমন ছিল না। আমরা প্রকৃতিগতভাবে ক্রিকেটার হয়েছি। টিভিতে দেখে খেলা শিখেছি। সাকিব, রাজ্জাক বা এনামুল জুনিয়র বলেন, এরা আমার এখানে এসেছে অনুশীলনের জন্য। সাকিব আল্লাহর দান। ট্যালেন্ট কিন্তু বানিয়ে নেয়া যায় না। বানিয়ে নেয়ার কথা বললে, আমি সেটা বিশ্বাস করব না। 

- তাইজুল এবং মিরাজকে কেমন দেখলেন?

মোহাম্মদ রফিক: হ্যাঁ, ওরাও ভাল করেছে। চার-মাস আগেও আমি ওদের নিয়ে কাজ করেছি। একাডেমি ছাড়াও জাতীয় দলে সপ্তাহ খানেকের মতো আমি ওদের নিয়ে কাজ করেছি। আমি ফাহিম ভাইকে আগেই বলছিলাম, যে ছয়টা খেলোয়াড় দিয়ে গেলাম এরা দ্রুতই জাতীয় দলে খেলবে। মিরাজকে আমি বলেছি, তুমি মন লাগিয়ে ক্রিকেট খেল। তাহলে দেখবে ভাল একটা পর্যায়ে যাচ্ছো। আমি বলেছিলাম দেখবে তুমি খুব দ্রুত বাংলাদেশ দলে সুযোগ পাবে।

 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...